free tracking

গাজীপুরের সাংবাদিক হত্যার পেছনে ‘হানি ট্র্যাপ’

ছিনতাই বা চাঁদাবাজি নয় হানি ট্র্যাপের দৃশ্য ধারণ করাতেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে গাজীপুরের দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যমতে, আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ৯ জন। যাদের হানি ট্র্যাপের ‘মূল কারিগর’ নারীসহ ৫ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।

গাজীপুর চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের একটি দোকানে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। ঘটনার পরপরই সময় সংবাদ নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদনে জানায়, এক ব্যক্তিকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় হত্যার শিকার হন তুহিন। তবে এরইমধ্যে খবর ছড়ায় চাঁদাবাজির সংবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন ছিনতাইয়ের দৃশ্য দেখে ফেলায় এই হত্যাকাণ্ড।

পরবর্তীতে ঘটনাস্থলের পাশের শাপলা ম্যানশনের সামনের এক ফুটেজে দেখা যায় ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে এক নারী ও পুরুষের মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। মুহূর্তেই চাপাতি হাতে ৫-৬ জন ওই ব্যক্তির ওপর হামলা করে। নিহত তুহিনের এক বন্ধু জানান, হামলার সেই দৃশ্য ধারণ করেন তুহিন। আর সে কারণেই তাকে খুন করে হামলাকারীরা।

পরবর্তীতে পুলিশ ওই আহত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে। তার নাম বাদশা মিয়া‌। বাদশা দাবি করেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বেরিয়ে আসার সময় এক নারী তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। বাদশার বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, যখনই তিনি (বাদশা) বুঝতে পারে যে হানি ট্র্যাপের শিকার হয়েছেন তখন ওই নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চাপাতি হাতে কয়েকজন এসে তাকে কোপাতে শুরু করে। আর সেই দৃশ্য ধারণ করেন সাংবাদিক তুহিন।

যেখানে বাদশার ওপর হামলা করা হয় সেই শাপলা ম্যানশন থেকে তুহিনকে হত্যার স্পষ্টের দূরত্ব ৮০০ মিটার। অনেকেই সন্দেহ করছেন এতো দূরে এসে হামলাকারীরাই কীভাবে খুন করলো?

সময় সংবাদের হাতে এসেছে তুহিনকে হত্যার ঘটনাস্থলের ঠিক পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। যেখানে শাপলা ম্যানসনের হামলাকারীদের এখানেও দেখা যাচ্ছে। তুহিনকে হত্যার পর ওই নারী ও চাপাতি হাতে ৮ জনকে পালাতে দেখা যায়‌।

দুই ঘটনার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ ওই নারীকে শনাক্ত করেছে। তার নাম গোলাপী। তার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ হানি ট্র্যাপ গ্রুপ গাজীপুরে সক্রিয়। হানি ট্র্যাপ ঘিরে হামলার দৃশ্য ধারণ করাতেই এ হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, ওরা বিভিন্ন স্থানে হানি ট্র্যাপের মাধ্যমে এসব করে। যখন তারা বুঝতে পারে কারো কাছে টাকা আছে, তখন তার পিছু নেয় এবং হানি ট্র্যাপে ফেলে। এই কাজটা করে গোলাপী মেয়েটা। আর তাকে ব্যাকআপ দেয় পুরুষগুলো। বাদশা যখন বুঝতে পারে তাকে হানি ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে তখন গোলাপীর সঙ্গে হাতাহাতি করে। ওই সময় হামলার শিকার হয়। সেই দৃশ্য ধারণ করার কারণেই তুহিনকে হত্যা করা হয়।

হত্যায় অংশ নেয়া ৯ জনের মধ্যে নারীসহ ৫ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ৫ জনকে। অন্যদের গ্রেফতারে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার।

তিনি জানান, নিহত সাংবাদিক তুহিনের ফোনটা এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তার ফোনে কী ভিডিও আছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অনেক কিছুই পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নিহত সাংবাদিক তুহিনের পরিবারের দাবি, আরো তদন্ত করতে হবে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল গাজীপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *