মানবদেহে কিডনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। প্রতি মিনিটে প্রায় অর্ধ কাপ রক্ত পরিশোধন করে তা থেকে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য অপসারণ করে প্রস্রাব তৈরি করে এই অঙ্গটি। এছাড়াও এটি শরীর থেকে অ্যাসিড দূর করে, পানি, লবণ ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হরমোন তৈরি করে।
তবে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কিডনির প্রতি যথাযথ যত্ন নেন না। এই অবহেলার ফলেই কিডনি রোগ ‘নীরব ঘাতক’ হয়ে উঠেছে। আমেরিকার প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক এই রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, কিডনি রোগের লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন নিরব থাকে এবং একবার শুরু হলে তা স্থায়ী ক্ষতির দিকে ধাবিত করে। নিচে কিডনি রোগের ৭টি সতর্কবার্তা তুলে ধরা হলো—
১. প্রস্রাবে ফেনা বা বুদবুদ
কিডনি রোগের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো প্রস্রাবের ধরণে পরিবর্তন। প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হতে পারে, রঙ ও পরিমাণেও ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কখনও কখনও প্রস্রাবে রক্তও দেখা যেতে পারে।
২. শরীরের ফুলে যাওয়া
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের মতে, কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তবে প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন বেরিয়ে যায় এবং চোখের চারপাশে ফোলাভাব দেখা দেয়। এছাড়া সোডিয়াম জমে পা ও গোঁড়ালিতে ফোলা দেখা দিতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে বিষাক্ত উপাদান ও বর্জ্য জমে যায়, যা শরীরকে দুর্বল করে তোলে। এছাড়াও এতে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যার ফলে রক্তে লাল কণিকার সংখ্যা কমে যায়। এতে মানুষ সব সময় ক্লান্ত, দুর্বল ও নিস্তেজ অনুভব করে।
৪. তীব্র চুলকানি
অগ্রসর পর্যায়ের কিডনি রোগে মিনারেল ও হাড়ের রোগ দেখা দেয়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ত্বকে শুষ্কতা ও চুলকানি হিসেবে। ঘাম গ্রন্থির সঙ্কোচন ও শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ এই সমস্যার কারণ।
৫. ইউরেমিয়া (রক্তে বর্জ্য জমে যাওয়া)
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্ত পরিশোধন হয় না, ফলে বর্জ্য রক্তে জমা হয়। এতে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয় এবং মুখে দুর্গন্ধ (ব্যাড ব্রেথ) তৈরি হয়।
৬. শ্বাসকষ্ট
কিডনি অতিরিক্ত তরল নিষ্কাশনে ব্যর্থ হলে তা ফুসফুসে জমে গিয়ে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। এর সঙ্গে অ্যানিমিয়া যুক্ত হলে শ্বাসকষ্ট আরও বাড়ে।
৭. পেশিতে খিঁচুনি
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ও ফসফরাসের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে পেশিতে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
বিশেষ পরামর্শ: উপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই আগে থেকেই সতর্কতা জরুরি।
Leave a Reply