রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া সস্তায় অপরিশোধিত তেল বিক্রি শুরু করে। যুদ্ধের আগে ভারতের তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ১%, কিন্তু ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে ৩০-৩৫%-এ পৌঁছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারত রাশিয়া থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করছে, যা শুধু দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার নয়, প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশেও রপ্তানি করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ তুলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কারণে মানুষ মরছে অথচ ভারত সেই রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কিনে লাভবান হচ্ছে। এর শাস্তি হিসেবে তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেন, যা কার্যকর হলে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০%। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্য কার্যত অপ্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়ে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। মোদি সরকার ঘোষণা করে, শুল্ক নিয়ে সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন অস্ত্র কেনা হবে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয়টি বোয়িং P-8 বিমান, স্ট্রাইকার যুদ্ধযান এবং জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পরিকল্পনা স্থগিত হয়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্ধারিত ওয়াশিংটন সফরও বাতিল করা হয়।
এগুলো শুধু প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতীক ছিল। এই চুক্তি স্থগিতের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—বন্ধুত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় না, বরং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই দ্বন্দ্ব শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন শক্তির খেলার ইঙ্গিত বহন করছে।
Leave a Reply