কিডনির সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করে না। ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না, কখন সমস্যা শুরু হয়েছে। তবে হাত ও পায়ের মাধ্যমে শরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে শুরু করে। এই সংকেতগুলো যদি আগে থেকে শনাক্ত করা যায়, তাহলে সময়মত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় এবং জটিলতা এড়ানো যায়। নিচে কিডনির সমস্যার প্রাথমিক ৭টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো হাত ও পায়ের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
১. হাত ও পায়ে ফোলা
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর অতিরিক্ত তরল বের করতে পারে না। এতে শরীরে পানি জমে গিয়ে হাত, পা, গোড়ালি ও পায়ের নিচের অংশ ফুলে যায়। এ ধরনের ফোলাভাব চামড়ায় চাপ দিলে দাগ পড়ে থাকে। অনেক সময় চোখ ও মুখেও ফোলাভাব দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি খুব সাধারণ একটি লক্ষণ।
২. ফুলে যাওয়া বা পাফি দেখানো চেহারা
হাত ও পায়ে তরল জমে গেলে অস্বাভাবিকভাবে বড় ও ফুলে যাওয়া দেখা যায়। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে এই ফুলাভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে চলাফেরায় অসুবিধা ও শক্তভাব অনুভূত হয়। এ ধরনের পরিবর্তন হলে কিডনি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৩. ত্বকের রং ও গঠনের পরিবর্তন
কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণে কাজ করে। এই কাজ ব্যাহত হলে ত্বকে চুলকানি, শুষ্কতা এবং র্যাশ দেখা দিতে পারে। হাত-পায়ের ত্বকে হলুদাভ-বাদামি দাগ, ফাটা বা খসখসে ভাবও আসতে পারে। অনেক সময় ত্বক ফ্যাকাসে দেখায়। এটি রক্ত চলাচল ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় হয়ে থাকে।
৪. পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা দুর্বলতা
কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচুনি, ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় হাত ও পায়ের পিন-চিমটি লাগার মতো অনুভূতি হয়। এসব সমস্যা সাধারণত রাতে ঘুমের সময় বেশি হয়।
৫. হাত ও পায়ের নখে পরিবর্তন
কিডনির সমস্যা হলে নখে অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যেমন: নখের অর্ধেক অংশ সাদা এবং বাকি অর্ধেক বাদামি বা গোলাপি হয়ে যায় যাকে ‘হাফ-অ্যান্ড-হাফ’ নখ বলা হয়। এছাড়া নখ ফ্যাকাসে হওয়া, দাগ পড়া ইত্যাদিও দেখা যায়। এসব পরিবর্তন কিডনি রোগজনিত অ্যানিমিয়ার লক্ষণও হতে পারে।
৬. হাত ও পায়ে ঠাণ্ডা লাগা বা অবশভাব
কিডনি দুর্বল হলে শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে হাত ও পায়ে ঠাণ্ডা অনুভব হয় এবং অনেক সময় ঝিঁ ঝিঁ ভাব বা অবশভাবও দেখা দেয়। এসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা স্নায়ুজনিত জটিলতা বোঝাতে পারে, যা কিডনি সমস্যা থেকে উদ্ভূত।
৭. হাত ও পায়ে চুলকানি
কিডনি ঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন করতে না পারলে রক্তে বর্জ্য জমে গিয়ে ত্বকে তীব্র চুলকানি সৃষ্টি করে। যদি এই চুলকানি অতিরিক্ত হয় এবং ঘুম বা দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে তা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Leave a Reply