free tracking

যে ৫ লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন কিডনি ক্যানসারে ভুগছেন!

কিডনি ক্যানসারকে অনেক সময় ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, কারণ এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শরীরে সক্রিয় থাকলেও কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। ফলে রোগটি শনাক্ত হয় দেরিতে, যখন অনেকটা এগিয়ে যায়। অথচ কিডনি ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়েই ধরা পড়ে, তাহলে তা সফলভাবে চিকিৎসা করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। নিচে এমন পাঁচটি প্রাথমিক লক্ষণের কথা বলা হলো, যেগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে, এসব উপসর্গ সবসময় ক্যানসারের কারণে হয় না অন্যান্য কারণেও হতে পারে।

১. প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেয়া

কিডনি ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রথম লক্ষণ হলো মূত্রে রক্ত আসা। এটি হেমেচুরিয়া নামে পরিচিত। অনেক সময় প্রস্রাবের রং গোলাপি, লাল বা বাদামি হয়ে যায়। এটি মূলত টিউমার কিডনির ভেতরের ছোট রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করায় ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ব্যথাহীনভাবে হয় এবং কয়েকদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মূত্রে রক্ত আসা যেকোনো সময়েই গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত। এটি সংক্রমণ বা কিডনিতে পাথরের লক্ষণও হতে পারে। যদি এটি কিডনি ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

২. পিঠের নিচের দিকে বা পাশে স্থায়ী ব্যথা

পিঠে ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও কিডনি ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা ভিন্ন ধরনের হয়। বিশেষ করে পাশের দিকে (ফ্ল্যাংক) বা পিঠের নিচে একটানা ব্যথা অনুভূত হয়। কোনো আঘাত বা চোট ছাড়াই যদি এই ব্যথা শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে তীব্রতা বাড়ে, তাহলে এটি উপেক্ষা না করে পরীক্ষা করানো দরকার।

এ ধরনের ব্যথা হয় টিউমার আশপাশের টিস্যু ও স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে। ব্যথাটি স্বাভাবিক মাসল পেইনের মতো দ্রুত সেরে যায় না। যদি মূত্রের রঙ পরিবর্তনের সঙ্গে এই ব্যথাও দেখা দেয়, তাহলে তা কিডনিতে সমস্যা ইঙ্গিত করতে পারে।

৩. হঠাৎ ও অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া

খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামে পরিবর্তন না করেও যদি শরীরের ওজন দ্রুত কমে যেতে থাকে, তাহলে তা হতে পারে কিডনি ক্যানসারের সূচনা। ক্যানসার শরীরের হরমোন, বিপাকক্রিয়া এবং পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা তৈরি করে। এতে রুচি কমে যায় ও শরীর শক্তি হারাতে শুরু করে।

বেশিরভাগ মানুষ ব্যস্ত জীবনযাপন বা মানসিক চাপে এমন ওজন কমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। তবে এটি যদি ক্লান্তি বা দুর্বলতার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৪. কিডনির আশপাশে চাকা বা ফোলাভাব

কিডনি অঞ্চলে বা পাঁজরের নিচে যদি কোনো চাকা, ফোলাভাব বা মাংসপিণ্ড অনুভূত হয়, তাহলে তা হতে পারে টিউমারের লক্ষণ। অনেক সময় রোগীরা নিজেরাই স্পর্শ করলে এই চাকা টের পান, আবার চিকিৎসকরাও নিয়মিত চেকআপে তা ধরতে পারেন।

তবে সব চাকা বা ফোলা ক্যানসারজনিত নয়—কিছু চাকা হতে পারে সিস্ট বা ফ্যাটের গঠনে। তবুও যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে স্ক্যান বা আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন, কারণ ক্যানসার হলে চাকা বা ফোলা ধীরে ধীরে বড় হয়।

৫. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও শক্তির ঘাটতি

কিডনি ক্যানসার শরীরে রক্তকণিকা উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটায় এবং প্রদাহ তৈরি করে, যার ফলে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) তৈরি হয়। এর ফলে রোগী অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করেন, যা দৈনন্দিন ক্লান্তির মতো সহজে কেটে যায় না।

সাধারণ কাজকর্ম বা বিশ্রামের পরেও যদি অবসাদ না কাটে, আর এর সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া বা মূত্রে রক্ত দেখা দেয়ার মতো উপসর্গও থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসায় সাফল্যের হার অনেক বেশি থাকে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *