দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি ও হানাহানিতে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। কয়েকমাস আগে তার দেওয়া এই সতর্কবার্তা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্ন দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত, তখন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক নেতাদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।তিনি বলেছিলেন, “যদি নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি কাটাকাটি করেন, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি।” একইসাথে তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে একটি নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তার আকাঙ্ক্ষার কথা জানান এবং বলেন, সেই পর্যন্ত তিনি এবং সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
সেনাপ্রধানের সেই শঙ্কা সম্প্রতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তীব্র আকার ধারণ করেছে। জামায়াতে ইসলামী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার বিভাগীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণে নারাজ। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি-ও বিদ্যমান ব্যবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবির বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামালের মতে, সেনাপ্রধান যে কাদা ছোড়াছুড়ির কথা বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখন সেই পথেই হাঁটছে। তবে তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি এখনো দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার পর্যায়ে যায়নি। তার মতে, কোনো কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গেলেও সেনাবাহিনী কোনো বিতর্কিত পদক্ষেপ নেবে না।
এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান এবং পারস্পরিক দোষারোপের চলমান সংস্কৃতি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সেনাপ্রধানের দূরদর্শী সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দলগুলো যদি ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a Reply