free tracking

গরম না ঠান্ডা দুধ, গাঢ় না পাতলা কোনটি কারা খাবেন, জানালেন পুষ্টিবিদ!

দুধ একটি পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের অংশ। একে সুপার ফুডও বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষকে নিয়মিত দুধ পান করার পরামর্শ প্রদান করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ পান করা উচিত। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমৃদ্ধ এই পানীয় নিয়েও অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিতর্ক রয়েছে।

দুধ পান নিয়ে একেকজন একেক ধরনের মতামত জানিয়ে থাকেন। কারও মতে গরম গরম দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, আবার কারও মতে গরম নয়; বরং ঠান্ডা দুধ পানে উপকার বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কেউ কেউ আবার বলেন, গরম গরম পাতলা দুধ পান করা বেশি ভালো। কেউ তো আবার একধাপ এগিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। স্বঘোষিত পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে দুধ পান নিয়ে নানা মতে স্বাভাবিকভাবেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয় মনে।

দুধ পানের এসব ব্যাপারে  কথা বলেছেন দিনাজপুরের রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আকতার। এ পুষ্টিবিদ বলেন

গরম এবং ঠান্ডা দুধ উভয়ই শরীরের জন্য উপকারী। তবে আপনি কোন ধরনের দুধ পান করবেন, তা নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়―যদি আপনার অ্যাসিডিক বা হজমজনিত সমস্যা থাকে, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে এবং ওজন কমাতে চান তাহলে ঠান্ডা দুধ পান করবেন। ঠান্ডা দুধে ইলেকট্রোলাইট থাকে, যা ডিহাইড্রেশন দূর করে ক্লান্তি দূর করে। ঠান্ডা দুধ ক্যালসিয়াম বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে, ফলে ক্যালোরি বেশি পোড়ে। তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে।

গরম দুধ কাদের জন্য:
যাদের ঘুম ভালো হয় না, হজমের সমস্যা নেই তারা উষ্ণ গরম দুধ পান করতে পারেন। আবার গরম দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে। তাই এই দুধ সহজেই হজম হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনে বিশেষ করে ঠান্ডায় সর্দি, কাশি থাকলে হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা দূর হয়। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য গরম দুধ উপকারী। শিশুদের জন্য সবসময় হালকা গরম দুধ পান করা ভালো। মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যায় গরম দুধ পানে প্রশান্তি মিলে। হালকা গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে পিরিয়ডের ব্যথা দূর হয়।

গাঢ় না পাতলা দুধ:
অনেকে দুধের ফ্যাট কমাতে পানি মিশিয়ে দুধ পান করেন। কিন্তু পানি মেশালে দুধের ফ্যাট কমে না বরং কমে যায় দুধের উপকারিতা। তবে গরুর দুধে ফ্যাট গ্লোবিউলিন একটু বড়, যার কারণে শিশুদের পানি মিশিয়ে খেতে বলা হয়। এতে শিশুদের হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দুধের সর আগে সরিয়ে পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

কেন ঠান্ডা ও পাতলা দুধ:
খুব বেশি গরম দুধ পান করবেন না। কারণ, খুব বেশি গরম দুধ পান করলে পেটের হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর পরিবর্তে হালকা গরম দুধ পান করবেন। আবার অনেকে দুধ অনেক বেশি জ্বাল দিয়ে গাঢ় করে খান। দুধের ঘনত্ব বা গাঢ়ত্ব তার পুষ্টিগুণ ও হজমের ওপর প্রভাব ফেলে। সাধারণত, গাঢ় দুধ বেশি পুষ্টিকর হতে পারে। তবে এটি হজম করা কিছু মানুষের জন্য কষ্টকর হতে পারে। তাই  দুধ দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে বেশি গাঢ় করে খাওয়া ঠিক নয়। এতে চর্বির ঘনত্বও বেশি হয়। যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স ও হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য ভালো নয়।

কখন খাবেন দুধ:

  • ১. যারা ওজন কমাতে চান তারা রাতে খাবারের পর দুধ পান করবেন না। কারণ, রাতে তেমন ক্যালোরি খরচ হয় না। আবার যাদের রাতের খাবার দেরিতে খাওযার অভ্যাস আছে, তারা রাতে খাবারের পর না খেয়ে বিকেলে দুধ পান করবেন।
  • ২. থাইরয়েড রোগীরা সকালে থাইরয়েড মেডিসিন গ্রহণ করেন। এ জন্য সকালের পরিবর্তে তাদের বিকেলে দুধ পান করা ভালো।
  • ৩. রাতে ঠান্ডা দুধ পান করলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই হালকা কুসুম গরম দুধ পান করতে পারেন। অন্তত খাবারের ৩০ মিনিট পর।
  • ৪. ডায়াবেটিসের রোগীরা ফ্যাটমুক্ত করে অর্থাৎ সর সরিয়ে দুধ পান করবেন। খাওয়ার পর না খেয়ে বিকেলে বা মিডমর্নিংয়ে দুধ পান করবেন।
  • ৫. শারীরিক ব্যায়াম করার পর দুধ পান করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দূর হবে এবং শরীরে পানির মাত্রা ঠিক থাকবে।
  • ৬. আবহাওয়া পরিবর্তনে সর্দি-কাশির সমস্যা এড়াতে হালকা গরম দুধ পান করলে ফ্লু সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ জন্য দুধের সঙ্গে হালকা হলুদ মিশিয়ে সকালে কিংবা বিকেলে পান করতে পারেন।

হালকা গরম দুধ কেন ভালো:
সর্দি, কাশি ও ভালো ঘুম হতে আরামদায়ক হালকা গরম দুধ। হজম শক্তি ভালো হবে। এ জন্য হালকা গরম পাতলা দুধ খাওয়া ভালো।

কেন ঘুমানোর আগে দুধ:
আমরা অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ পান করি। দুধে ট্রিপটোফ্যান ও মেলাটোনিন আছে। ট্রিপটোফ্যান শরীরে সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে এবং সেরোটোনিন স্নায়ুকে শান্ত করে ও দুশ্চিন্তা দূর করে। ফলে দ্রুত ঘুম আসে। আর মেলাটোনিন জৈবিক ঘড়ি নামে পরিচিত, যা ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।এ জন্য ঘুমানোর আগে দুধ পান করলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে। তবে এ জন্য রাতের খাবার দুধ খাওয়ার ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে শেষ করতে হবে। অতিরিক্ত গরম দুধ না খেয়ে হালকা গরম দুধ পান করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *