নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতি চরম অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অনড় অবস্থান যেন ধীরে ধীরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া তার বক্তব্যে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি আবারও সেই বক্তব্যকে সামনে এনেছে।
ফেব্রুয়ারিতে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, “যদি নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, তাহলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।” নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই বড় রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দোষারোপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
বর্তমান ব্যবস্থার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে অনড় অবস্থান জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বলছে, পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে এনসিপির দাবি, বিচার বিভাগে সংস্কার না হলে জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেও কার্যত সমাধানের কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত এই মোতায়েন বহাল থাকবে। এমনকি মাঠ পর্যায়ে ৮০ হাজার সেনা নামানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। তার আশা, ২০২৬ সালে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে।
বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল মনে করেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রাসঙ্গিক হলেও বর্তমানে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো শঙ্কা নেই। তার ভাষায়, “দলগুলোর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ। তবে এটিকে সরাসরি কাদা ছোড়াছুড়ি বলা যাবে না। সেনাবাহিনীও কোনোভাবেই বিতর্কিত পদক্ষেপ নেবে না।”
সারসংক্ষেপ
নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি—সব মিলিয়ে রাজনীতি এখন এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন একটাই—সেনাপ্রধানের আশঙ্কা কি সত্যি হতে চলেছে, নাকি রাজনৈতিক নেতারা শেষ পর্যন্ত সমঝোতার পথে হাঁটবেন?
Leave a Reply