free tracking

উঠে যাচ্ছে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা!

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আর থাকছে না। এর পরিবর্তে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিশেষ বিসিএসের আদলে হবে শিক্ষক নিয়োগ। এর জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এই বিধি জারি হলে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংশোধিত বিধিটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য আছে। সেখান থেকে এলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা জারি করবে। এই বিধি জারি হলে পিএসসির আদলে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

যত শূন্যপদ তত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীদেরও নিবন্ধন পাস করে আর বসে থাকতে হবে না।’
পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন শিক্ষক নিবন্ধনে যেভাবে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়, সেভাবে আর হবে না। অনেকটা বিশেষ বিসিএসের মতো হবে।

দেখা গেল, ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কিছুটা এমসিকিউ, আবার কিছুটা লিখিত থাকছে। আর সবশেষে ভাইভা। যা প্রার্থীদের জন্যও সহজ হবে। যখন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে তখন থেকেই বয়স গণনা করা হবে।

এতে আর বয়সের বাধাও থাকবে না। আগামী ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনের পরিবর্তে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।’
বর্তমানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়। এরপর গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করে। ফলে প্রার্থীদের দুবার আবেদন করতে হয়। এ ছাড়া নিবন্ধন সনদ অর্জন করতে অনেকের বয়স শেষ হয়ে যায়। পরে তাঁরা আর গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেন না। এসব অসামঞ্জস্য দূর করতে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিয়োগের বিধি সংশোধন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সংশোধিত বিধিতে শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তির পরিবর্তে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের দিন থেকে প্রার্থীর বয়স হিসাব করা হবে। নতুন বিধিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের সংখ্যার দ্বিগুণ প্রার্থীকে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। অর্থাৎ শূন্যপদের সংখ্যা ৫০ হাজার হলে ভাইভায় এক লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন। যত পদ শূন্য থাকবে, মৌখিক পরীক্ষায় তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে পাস করানো হবে, যাতে কেউ যোগদান না করলে অপেক্ষমাণ থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা যায়।

জানা যায়, আগে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব ছিল ম্যানেজিং কমিটির। তারা বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অদক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগ দিত। এরপর ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে শুরু করে। যাঁরা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন, তাঁদের মধ্য থেকে ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিত। কিন্তু এর পরও ঘুষ লেনদেন বন্ধ হয়নি। নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা টাকা না দিলে নিয়োগ পেতেন না।

এরপর ২০১৫ সাল থেকে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্বও দেওয়া হয় এনটিআরসিএকে। তখন থেকে এনটিআরসিএ একবার নিবন্ধন পরীক্ষা নিত। আবার শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি দিত। সেখানে আবার শিক্ষকদের আবেদন করতে হতো। আর এই দুই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে প্রার্থীদের চাকরির নির্দিষ্ট বয়স পার হয়ে যায়। সূত্র জানায়, নিবন্ধন পরীক্ষার জটিলতা ও নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক প্রার্থী আর শিক্ষক হতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এনটিআরসিএর আগের দুই গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের তুলনায় আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা নিতান্তই কম। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির প্রায় ৯৭ হাজার পদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৯ হাজার পদ পূরণ হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় ৭৭ হাজার পদ পূরণ হয়নি। সর্বশেষ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে এক লাখ ৮২২টি শূন্যপদ রয়েছে। এর বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ৫৭ হাজার। ফলে অর্ধেক পদই পূরণ হবে না। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না পাওয়ায় স্কুল-কলেজে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি পড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জটিল প্রক্রিয়ার নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে অনেক প্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। আবার এই পরীক্ষা শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষক পদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক চাকরি প্রার্থী নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হলেও ৩৫ বছরের বেশি হলে আর গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারছেন না। কারণ একজন প্রার্থী নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে গণবিজ্ঞপ্তির আবেদন পর্যন্ত দুই-তিন বছর সময় লেগে যাচ্ছে। অনেক সময় এর বেশি সময়ও লাগছে। ফলে প্রার্থীরা দিন দিন শিক্ষক হতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকটা বিশেষ বিসিএসের আদলে এই নিয়োগ দেওয়া হলে অনেক প্রার্থী আবারও আগ্রহী হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *