মানুষ কেন পরকীয়া করে, গবেষণা কী বলে?মানুষ কেন পরকীয়া করে, গবেষণা কী বলে?ভালোবাসা, সংসার, সন্তান—সবই আছে। তবু কেন মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে? কেবল শারীরিক আকর্ষণ, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কারণ?
শিরোনামের প্রশ্নটা আপাতদৃষ্টে যতটা সহজ-সরল, আদতে এর উত্তর ততটাই কঠিন। পরকীয়া কখন থেকে শুরু হলো? এর একটাই উত্তর, যখন থেকে বিয়ের উদ্ভব ঘটেছে। রোমান্টিক সম্পর্কের সবচেয়ে সংবেদনশীল, জটিল আর বিতর্কিত অধ্যায়ের নাম পরকীয়া। এর পেছনে আছে জটিল মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জৈবিক—এমনকি আর্থিক পরিপ্রেক্ষিত।
বিশ্বজুড়ে গবেষণা কী বলছে
পরকীয়া নিয়ে সবচেয়ে বিস্তৃত গবেষণাগুলোর একটি করেছে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনফিডেলিটি রিকভারি ইনস্টিটিউটের গবেষক দল। এই গবেষকেরা বলছেন, মানুষ কেবল শারীরিক আকর্ষণের জন্য নয়, অনেক সময় ভালোবাসা না পাওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া, নতুন কিছু পাওয়ার হাতছানি বা মানসিক সমস্যার কারণেও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির কিনসি ইনস্টিটিউটে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন ড. জাস্টিন লেমিলার। পরকীয়া, যৌনকল্পনা, সম্পর্কের বৈচিত্র্য ও যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে তিনি করেছেন উল্লেখযোগ্য গবেষণা। ‘টেল মি হোয়াট ইউ ওয়ান্ট’ বইয়ে লেমিলার লিখেছেন, ‘পরকীয়া সব সময় অসুখী দাম্পত্যের ফল নয়। অনেক সময় সুখী দম্পতির একজন নতুন অভিজ্ঞতা, বৈচিত্র্য বা উত্তেজনার খোঁজে সম্পর্কের বাইরে পা বাড়াতে পারে।’
গবেষণায় উঠে আসা প্রধান কারণগুলো
১. দাম্পত্য সম্পর্কে অসন্তুষ্টি: বোঝাপড়ার অভাব, অবহেলা, শারীরিক সম্পর্কে অসন্তুষ্টি ইত্যাদি কারণে মানুষ অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
২. রোমাঞ্চ ও নতুনত্বের খোঁজ: ‘একঘেয়ে’ সংসার থেকে বেরিয়ে নতুন উত্তেজনা অনুভবের জন্য অনেকে পরকীয়ায় জড়ান। গবেষণা বলছে, এ ধরনের সম্পর্ক সাধারণত তিন মাস থেকে দুই বছরের বেশি টেকে না।
৩. মানসিক স্বস্তি ও মুক্তি: দায়িত্ব আর দুশ্চিন্তার ভারে ক্লান্ত মানুষ অনেক সময় সম্পর্কের বাইরে গিয়ে আশ্রয় খোঁজে।
৪. ডেটিং অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: প্রযুক্তি পরকীয়াকে আরও সহজলভ্য করেছে। পরিচয় গোপন রেখেও সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়া যায়।
৫. কর্মস্থলের ঘনিষ্ঠতা: দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাজ করার ফলে সহকর্মী থেকে প্রেমিক/প্রেমিকা হয়ে ওঠার ঘটনাও নতুন নয়।
৬. প্রেমে পড়া স্বভাব: কেউ কেউ বারবার প্রেমে পড়তে অভ্যস্ত। সঙ্গী যত ভালোই হোক, তাঁরা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
৭. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যায় অনেকে স্থায়ী সম্পর্কে স্থির থাকতে পারেন না।
৮. স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা: সামাজিক মর্যাদা বা আর্থিক সুবিধার জন্যও কেউ কেউ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে যান।
৯. অল্প বয়সে বিয়ে: ২০ বছরের আগেই যাঁদের বিয়ে হয়, তাঁদের মধ্যে পরে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
১০. শৈশবের ট্রমা: মা-বাবার ঝগড়া ও অশান্তিতে বেড়ে ওঠা সন্তানেরা অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
১১. প্রতিশোধপরায়ণতা: অতীতে প্রতারিত কেউ অনেক সময় নতুন সম্পর্কে গিয়ে প্রতারণাকে নীরব প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করেন।
১২. অভ্যাসগত প্রতারণা: গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা একবার প্রতারণা করেছেন, তাঁদের একাধিকবার প্রতারণায় জড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল।
শেষ কথা
সব মিলিয়ে বোঝা যায়, পরকীয়া কোনো একক কারণে ঘটে না। রাগ, অবহেলা, নতুনত্বের খোঁজ কিংবা ক্ষমতার অনুভূতি—নানা কারণই মানুষকে টেনে নেয় অন্য সম্পর্কে।
তবে গবেষকেরা মনে করিয়ে দেন, খোলামেলা যোগাযোগ, পারস্পরিক মনোযোগ আর প্রতিশ্রুতিই হতে পারে যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
Leave a Reply