free tracking

লবণ বেশি খেলে কী ঘটে শরীরে, কেন নিষেধ করা হয়? জানালেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ!

প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট থেকে কেনা খাবার কিংবা বাসায় তৈরি করা মজাদার খাবারে প্রচুর পরিমাণ লবণ থাকে। খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি টক-ঝাল-মিষ্টিসহ সব কিছুর সঙ্গেই ব্যবহার উপযোগী। আবার অল্পতে খুব সহজেই সংরক্ষণ করা যায় প্রয়োজনীয় এই উপাদান।

হিউস্টন মেথডিস্টের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা মিডোস বলেন, লবণে থাকা সোডিয়াম পেশী সংকোচন, স্নায়ু ও শরীরের অন্যান্য জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইলেকট্রোলাইট। এটি সোডিয়ামকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ করে তোলে। যা শরীরে খুব বেশি প্রয়োজন। কিন্তু লবণ প্রয়োজনের থেকে বেশি গ্রহণ করা হলেই পরিণতি খারাপ হয়। এ ব্যাপারে হিউস্টন মেথডিস্ট অর্গানাইজেশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক, লবণ বেশি খেলে শরীরে কী ঘটে এবং করণীয় কী।

লবণ বেশি খেলে কী হয়:
লবণাক্ত খাবার খাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেমন অনুভূতি হয়, তা কম-বেশি সবারই জানা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া, পা বা হাত ফোলা, ব্যক্তিভেদে মাথাব্যথা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা শরীরকে বেশি দুর্বল করে না। কেননা, কিডনি সবসময় আপনার শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে এসব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু কিডনিতে যখন অতিরিক্ত লবণ পড়ে, তখন কিন্তু শরীরে খারাপ প্রভাব পড়া শুরু হয়।

ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা বলেন, আপনার কিডনি যখন খাবার থেকে গ্রহণ করা লবণ অপসারণ করতে না পারে, তখন শরীরে সোডিয়াম জমা হতে শুরু করে। সোডিয়াম যখন বেশি ধরে রাখা হয়, তখন শরীর পানি দিয়ে এটি পাতলা করার চেষ্টা করে, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং তরল ধরে রাখার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, পেট ফাঁপা ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

ঘন ঘন অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হলে প্রক্রিয়াটি হৃদপিণ্ড, রক্তনালী ও কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা বলেন, শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিণ্ডকে সারা শরীরে রক্ত পাম্প করার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এতে ধমনীতে চাপ বৃদ্ধি পায়। এর থেকে বড় কথা হচ্ছে, যখন হৃদপিণ্ড বেশি পাম্প করে, তখন এটি কিডনিসহ প্রতিটি অঙ্গের রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে।

এসব কারণে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি হয়। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ ও কিডনিতে পাথর হওয়া।

প্রতিদিন কী পরিমাণ সোডিয়াম অতিরিক্ত:
সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করার আগে জেনে রাখা উচিত, কতটা লবণ অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়। ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা বলেন, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকানদের জন্য ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের খাদ্যতালিণকাগত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে, এক চা চামচে কী পরিমাণ লবণ থাকতে পারে। এটি এমন পরিমাণ যা একদিনে অতিক্রম করা ঠিক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গড় নাগরিকরা এর থেকে অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করে। বাস্তবে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০০ মিলিগ্রাম লবণ গ্রহণ করে এবং অনেকেই হয়তো এটি বুঝতেও পারে না।

এএইচএ বলে, শরীরে সঠিকভাবে কাজের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম লবণ প্রয়োজন হয়। এই সীমা খুবই কম লোক অতিক্রম করতে পারে। সুস্থ কিডনি প্রয়োজনীয় পরিমাণ সোডিয়াম ধরে রাখতে কার্যকর।

প্রয়োজনের থেকে কীভাবে বেশি গ্রহণ করা হয়:
ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা বলেন, লবণ খাবারের স্বাদ কার্যকর প্রদান করে। কিন্তু যখন লবণ বাদ দেয়া হয়, তখন খাবার খুব একটা ভালো লাগে না। কেউই তো স্বাদহীন খাবার পছন্দ করে না। শুধু স্বাদের আকাঙ্ক্ষা থেকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা হয়।

আমাদের লবণ গ্রহণের ৭০ শতাংশেরও বেশি মূলত খাদ্য উৎপাদন বা তৈরির সময় যোগ করা লবণ থেকে আসে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেটজাত ও প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়া হলে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।

১. কতটা লবণ গ্রহণ করছে জেনে নিন:
ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা মনে করেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতা। যা শুরু হয় অতিরিক্ত গ্রহণ করছেন কিনা তা জানা ও কমানোর পরিকল্পনার মাধ্যমে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি প্রক্রিয়াজাত বা প্রস্তুতকৃত খাবারের লবণের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে আপনি যেসব লবণাক্ত খাবার খান, সেই খাবারের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি যদি সঠিক পরিমাণ লবণ গ্রহণ করেন, এরপরও নিশ্চিত হয়ে নিন তা যেন পুরো খাবারে সমানভাবে থাকে এবং তা যেন কিডনিতে একদিনের জন্যও একদম বেশি না লাগে।

২. খাবারের লেবেল পড়া ও কোন খাবারে সোডিয়াম কম:
খাওয়ার জন্য কেনা প্রতিটি খাবারের লেবেল থাকে। এতে সব বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য ডায়েটিশিয়ান আমান্ডার পরামর্শ, সবসময় খাবারের পুষ্টির লেবেল পড়ুন এবং খাবারের সোডিয়ামের পরিমাণ খেয়াল করুন। এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে, যাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার হচ্ছে সেসব খাবার, যাতে প্রতি পরিবেশনে ১৪০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ থাকে না।

তবে কখনো মনে করা যাবে না যে, লেবেলে কম সোডিয়াম দাবি করা মানেই তা স্বাস্থ্যকর। এর সহজ অর্থ হচ্ছে, পণ্যটিতে স্বাভাবিকের থেকে ২৫ শতাংশ কম সোডিয়াম রয়েছে। যা প্রায়ই বেশি থাকে।

৩. প্রক্রিয়াজাত এড়িয়ে সজীব-সতেজ খাবারকে গুরুত্ব দেয়া:
কতটা লবণ খাচ্ছেন তা নিয়ন্ত্রণের উত্তম উপায় হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে যাওয়া। এর অর্থ, গোটা ফল ও শাকসবজি বেছে নেয়া এবং তা যতটা সম্ভব তাজা নেয়া ও খাবার প্রস্তুত করা। সবজিতে লবণের পরিমাণ না ভেবে হিমায়িত খাবার ব্যবহার করতে পারেন। টিনজাত সবজিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে পুষ্টির লেবেল যাচাই করে সোডিয়ামের পরিমাণ জেনে নিতে পারেন।

তবে হ্যাঁ, রেস্টুরেন্ট ও মুদি দোকানের কিছু খাবার তাজা কিংবা সজীব-সতেজ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মাঝে মধ্যে তা লবণ দিয়ে প্যাকেট করার সম্ভাবনা থাকে।

৪. স্বাদ বাড়াতে বিকল্প উপায়:
লবণ খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এবং এটিই একমাত্র উপায়। তবে লবণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি খাবারের স্বাদ ভিন্নভাবে তৈরির চেষ্টা করুন। যেমন- লেবু বা লেবুর রস, তাজা বা শুকনো ভেষজ বা মশলা ও ভিনেগার যোগ করতে পারেন।

৫. লবণাক্ত খাবার সাবধানতার সঙ্গে খাওয়া:
লবণাক্ত খাবার কেনা এবং তা খাওয়ার আগে অবশ্যই তা ভালো করে দেখে তবেই কিনতে হবে। তবে সাধারণত কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে সাবধান হওয়া উচিত। যেমন- হিমায়িত খাবার, টিনজাত ও প্যাকেটজাত স্যুপ, চিপস ও স্ন্যাকস, সয়া সস, ড্রেসিং সালাদ ও গরম সস-সহ কিছু মশলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *