সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরেছে। নড়াইলে এ যাবৎকালের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ দামে পাট বেচাকেনা হচ্ছে। নড়াইলের সর্ববৃহৎ পাটের পাইকারি মোকাম মিঠাপুর হাটে সপ্তাহের ব্যবধানে রোববার সব ধরনের পাট দুইশ’ টাকা বেড়ে প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবার অতিবর্ষণে পাটের ফলন ব্যাহত হলে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়লেও পাটের বাড়তি দামে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এ বছর নড়াইলে মোট ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে মোট ৫৮ হাজার ৫৯০ টন পাট উৎপাদানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কর্তন করা হয়েছে ৯৮ শতাংশ পাট।
সরেজমিন রোববার নড়াইলের মিঠাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন পাটে সয়লাব মিঠাপুর পাইকারি পাটের হাট। সারা বছরে জমানো দায়দেনাসহ জরুরি নানা প্রয়োজনে চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট বেচতে হাটে নিয়ে আসেন। বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বাহনে চাষিদের পাট হাটে উঠতে না উঠতেই ফঁড়িয়া ব্যাপারীরা ঘিরে ধরেন বিক্রেতাদের, পাটের মান পরখ করে দাম হাঁকছেন, দরদামে পটলেই দেখতে দেখতে মণকে মণ পাট হাত বদল হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীর গুদামে। মান ভেদে প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। গত বছর একই মানের পাটের দর ছিলে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
হাটে পাট বেচাকেনার এ নয়নাভিরাম ছবি শুধু মিঠাপুর হাটে নয়, বর্তমানে এ ছবি মাইজপাড়া তুলারামপুরসহ জেলার অন্যান্য পাটের পাইকারি মোকামেও।
চাষিরা জানান, বাজারে ভালো মানের পাটের বরাবরই চাহিদা থাকে। অন্যান্য বছর অনাবৃষ্টির কারণে পানি শূন্য থাকে খাল বিল ডোবা। পাট পঁচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। পানির সংকটে বাধ্য হয়ে নোংরা পানিতে পাট পঁচাতে হয়। এতে পাটের আঁশ কালো হয়ে মান হারায়। পক্ষান্তরে এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে নদী-নালা, খাল-বিলে স্বচ্ছ পানি ছিল। পাট পঁচাতে অসুবিধা হয়নি। পাটের রঙও ভালো। মান ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে দামও।
জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, কোনো প্রকার বাজার সিন্ডিকেট বা কারসাজির খপ্পরে চাষিরা যাতে পাটের বর্তমান দাম থেকে বঞ্চিত না হয় এ ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
Leave a Reply