free tracking

পরিবারের কারও ক্যানসার থাকলে আপনার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতটা?

ক্যানসার এমন এক জটিল রোগ যা শরীরের ক্ষতিকর ক্যানসার কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন এবং দ্রুত বৃদ্ধির কারণে হয়ে দাঁড়ায়। এই রোগ আপাতভাবে সংক্রমক নয়। কিন্তু জিন কথা বলে। পরিবারের কারও যদি এই মারণরোগ থেকে থাকে তবে তা পরিবাহিত হতে পারে আপনার শরীরেও? যদিও ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসার হওয়ার পেছনে বংশগত কারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও জীবনযাপন পদ্ধতি, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসও সমানভাবে দায়ী। তাই পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে বটে, তবে তা শতভাগ নিশ্চিত করে না।

এই বিষয়ে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, সব ক্যানসারই বংশগত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে মোট ক্যানসারের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ সরাসরি জিন বা বংশগত কারণের জন্য হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, স্তন ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার অনেক সময় BRCA1 বা BRCA2 নামক জিনের পরিবর্তনের কারণে বংশগতভাবে হতে পারে। আবার কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার বা কিছু ক্ষেত্রে রক্তের ক্যানসারও পরিবারে একাধিক সদস্যের মধ্যে দেখা যায়। যদি নিকট আত্মীয়—যেমন মা, বাবা, ভাইবোন বা সন্তান—এই রোগে আক্রান্ত হন, তবে অন্য সদস্যদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে।

শুধুমাত্র বংশগত জিন নয়, ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে পরিবেশ এবং জীবনধারা। ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, দূষণ বা অতিরিক্ত রোদে থাকা—এসবই ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়। অর্থাৎ পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস না থাকলেও, খারাপ অভ্যাসের কারণে একজনের ক্যানসার হতে পারে। আবার ইতিহাস থাকলেও, যদি সঠিক জীবনযাপন করা হয় তবে ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

আরও একটি বিষয় হল বয়স। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরিবারের কারও অল্প বয়সে বিশেষ করে ৫০ বছরের আগে ক্যানসার ধরা পড়ে, সেটি বংশগত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।

যদি পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে আগেভাগে পরীক্ষা করানো এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ম্যামোগ্রাফি, কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে কোলোনোস্কপি ইত্যাদি। জিন পরীক্ষা (Genetic Testing) করেও জানা সম্ভব আপনি কোনও ঝুঁকিপূর্ণ জিন বহন করছেন কি না।

পরিবারে কারও ক্যানসার থাকলে আপনার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বাড়তে পারে, বিশেষ করে যদি নিকট আত্মীয় আক্রান্ত হন। তবে এটি নিশ্চিত করে না যে আপনিও ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। সচেতন জীবনযাপন, নিয়মিত পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে ঝুঁকিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই ভয় না পেয়ে সচেতন থাকাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *