free tracking

ফের মহাবিপদের সামনে ইরান!

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দীর্ঘতম ও একমাত্র নৌযান চলাচলের উপযোগী নদী কারুন এবার মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খরা, প্রবাহ হ্রাস, রাসায়নিক দূষণ ও জলাভূমি ধ্বংসের ফলে অদূর ভবিষ্যতে নদীর একটি বড় অংশ বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

নদীর এই সংকটের পেছনে বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত পানি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কৃষি কার্যক্রমকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আলী আরভাহি ইরান ইন্টারন্যাশনালকে জানান, কারুন ও গোতভান্দের মতো বড় বাঁধ নির্মাণ, ইন্টার-বেসিন পানি স্থানান্তর এবং খুজেস্তানে আখ ও ধানের মতো উচ্চ পানিনির্ভর ফসলের চাষ—এই তিনটি কারণেই নদীটি চরম হুমকিতে পড়েছে।

খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত কারুন-৩ ও গোতভান্দ এবং চাহারমহল ও বখতিয়ারিতে অবস্থিত কারুন-৪ বাঁধ নদীর পানিপ্রবাহকে তীব্রভাবে হ্রাস করেছে। এক সময় প্রতি সেকেন্ডে ৫০০-৬০০ ঘনমিটার প্রবাহ থাকলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০০ ঘনমিটারের নিচে।
পানি সংকটের সাথে যুক্ত আখ চাষখুজেস্তান প্রদেশে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ চলছে, যা নদীর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। আরভাহির মতে, খরাপ্রবণ এলাকায় এমন পানি-নির্ভর ফসল চাষ টেকসই নয়, বরং এটি পরিবেশগত বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করছে।

বাড়ছে বায়ু দূষণও

খুজেস্তান ইরানের সর্বাধিক বায়ু দূষণের শিকার অঞ্চলগুলোর একটি।গত বৃহস্পতিবার দেশটির এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম জানায়, আহভাজে স্কোর ছিল ১৬৮, হেন্দিজানে ১৬৭, বেহবাহানে ১৬৩—যা “অস্বাস্থ্যকর” লাল স্তরের মধ্যে পড়ে।

বায়ু মান সূচক অনুযায়ী, ১০০’র ওপরে যেকোনো স্কোর জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর বসবাস অনিরাপদ।

জলবায়ু সংকট ও জাতীয় চ্যালেঞ্জ

ইরান ইতোমধ্যেই তীব্র সুপেয় পানি সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও কৃষিখাতের ধস মোকাবিলা করছে।পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মনসুর সোহরাবি বলেন, দেশব্যাপী খরা পরিস্থিতি এখন চোখে পড়ার মতো। কর্তৃপক্ষ যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে এ সংকট এড়ানো যেত।

গত এক বছরে ইরানে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে এবং বৃষ্টিপাত ৪৫% হ্রাস পেয়েছে, যা মরুকরণকে ত্বরান্বিত করেছে।

ইরানের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত কারুন

৯৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কারুন নদী জাগ্রোস পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে খুজেস্তান পেরিয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়। এটি কেবল পরিবেশ নয়, বরং ইরানের অর্থনীতি, কৃষি ও সমাজব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

এখনই সতর্ক হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— কারুনকে বাঁচাতে না পারলে ইরানকেও বাঁচানো যাবে না।সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *