free tracking

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে মুখের ক্যানসার, জানুন প্রতিরোধের উপায়!

ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে তরুণদের মধ্যে মুখগহ্বর ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব। ৩০ ও ৪০ বছরের মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যাচ্ছে এই রোগ। যা আগে মূলত বয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে, বিশ্বের মোট মুখগহ্বর ক্যানসার রোগীর এক তৃতীয়াংশই ভারতে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) বলছে, বর্তমানে ভারতের ২০ শতাংশ মুখগহ্বর ক্যানসার রোগী ৪৫ বছরের কম বয়সী যা ২০ বছর আগেও ছিল মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ।

মুখগহ্বর ক্যানসারের মূল কারণ: ধোঁয়াবিহীন তামাক ও সুপারি সেবন

তরুণদের মধ্যে মুখের ক্যানসার বৃদ্ধির প্রধান কারণ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার যেমন পান, গুটখা, খৈনি এবং সুপারি। এই দ্রব্যগুলো সহজলভ্য, সস্তা এবং কিশোর-তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব দ্রব্য সেবনের ফলে মুখে ‘প্রিক্যানসারাস’ অবস্থা তৈরি হয়, যা পরে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

বিশেষ করে সুপারি বা মুখশুদ্ধি জাতীয় দ্রব্য দীর্ঘমেয়াদে মুখগহ্বরের ফাইব্রোসিস ঘটায় মুখের অভ্যন্তরীণ টিস্যু শক্ত হয়ে যায়, যা ভবিষ্যতে ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই এসব দ্রব্যকে ‘নিরীহ’ ভেবে সেবন করেন, অথচ এর ক্যানসারসৃষ্টিকারী প্রভাব ভয়ংকর।

প্রাথমিক উপসর্গ ও ‘নিরাপদ’ তামাকজাত দ্রব্যের ভুল ধারণা

অনেক তরুণ বিশ্বাস করেন হারবাল, ফ্লেভার্ড বা তথাকথিত “নিরাপদ” তামাকজাত দ্রব্য ক্ষতিকর নয়। প্যাকেটে থাকা স্বাস্থ্য সতর্কতা উপেক্ষা করেন অধিকাংশই। ফলে নিচের উপসর্গগুলো উপেক্ষিত থেকে যায়।

* দীর্ঘস্থায়ী মুখের ঘা
* মুখে লাল বা সাদা দাগ
* অকারণে রক্তপাত

এসব উপসর্গ উপেক্ষা করায় ক্যানসার ধরা পড়ে অনেক দেরিতে যার ফলে চিকিৎসা জটিল হয় এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।

জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

বর্তমান সময়ের কিছু জীবনধারা মুখগহ্বর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে—

* চাপযুক্ত কর্মজীবন
* নিয়মিত মদ্যপান (যা তামাকের সঙ্গে মিলিত হয়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়)
* ফল ও সবজির অভাবে অপুষ্টি
* দীর্ঘসময় বসে থাকা ও শরীরচর্চার অভাব

এছাড়াও, এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহার ছাড়াও মুখ ও গলার ক্যানসারের একটি বড় কারণ হয়ে উঠছে।

প্রতিরোধের উপায়

যথাযথ সময়ের মধ্যে সচেতনতা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে মুখগহ্বর ক্যানসার অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।যেমন:

* তামাক ও সুপারি বর্জন
* নিয়মিত মুখগহ্বর পরীক্ষা
* ভালোভাবে মুখের পরিচর্যা
* পুষ্টিকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ
* এইচপিভি টিকা গ্রহণ (বিশেষ করে যারা তামাক ব্যবহার করেন না)

সরকারি পর্যায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকের উপর কঠোর বিধিনিষেধ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, এবং স্পষ্ট স্বাস্থ্য-সতর্কতার প্রচার এই রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানো দরকার।

তরুণদের রক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা ও আগাম শনাক্তকরণ

তরুণদের মধ্যে ক্যানসার যেহেতু বাড়ছে, তাই এই বয়সভিত্তিক গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থা ও সমাজের যৌথ উদ্যোগে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা জরুরি—

* তামাক ও সুপারি সেবনের ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষামূলক কর্মসূচি
* সহজলভ্য ও নিয়মিত মুখগহ্বর স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ
* স্বাস্থ্যবান্ধব জীবনযাপনের পক্ষে নীতিমালা ও সহায়তা

এভাবে আগাম প্রতিরোধ ও সচেতনতার মাধ্যমে তরুণদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে এবং ভারতীয় সমাজে মুখগহ্বর ক্যানসারের প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে।

উল্লিখিত পরিসংখ্যান WHO GLOBOCAN 2022 ও ICMR-এর তথ্যভিত্তিক। এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সচেতনতা ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি, এটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *