free tracking

ঘন ঘন হাঁচির সঙ্গে নাকে সমস্যা, জেনে নিন ঝুঁকিতে ভুগছেন কি না!

ঢুলোর সংস্পর্শে আমাদের দেহ প্রায়ই প্রতিক্রিয়া দেখায়। কখনও নাক বন্ধ বা বারবার হাঁচি, কখনও চোখ লাল হয়ে পানি আসে অনেকের। আর এসবই মূলত ধুলোর অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে। তবে আগেভাগেই শনাক্ত ও প্রতিকার করে নেয়াই ভালো। কারণ অনেক সময় এসব জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে পালমোনোলজিস্ট প্রধান ডা. কুলদীপ কুমার এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন। বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

পালমোনোলজিস্ট প্রধান ডা. কুলদীপ কুমার গ্রোভার জানিয়েছেন, ধুলো মানুষের দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ধুলো কিরার কারণে। এই ক্ষুদ্র জীবাণু বিছানা, সোফা, কার্পেট এবং অন্য নরম আসবাবপত্রে বাসা বাঁধে। ধুলোর প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া দৈনন্দিন জীবনকে অনেকটা আরামদায়ক করে।

ধুলো অ্যালার্জির মূল কারণ হলো ধুলো কিরা। এগুলো চোখ, নাক এবং শ্বাসনালীতে প্রভাব ফেলে। ধুলোর সংস্পর্শে সাধারণত নাকের জ্বালা, হাঁচি, চোখ লাল হওয়া, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তবে কখনো কখনো উপসর্গ বাড়ি বা শোবার ঘরে বেশি হয়।

ধুলোর অ্যালার্জির লক্ষণ: ডা. গ্রোভার জানিয়েছেন, ধুলোর অ্যালার্জির সাধারণ পাঁচটি লক্ষণ রয়েছে, যা সহজেই শনাক্ত করা যায়।

১. ঘন ঘন হাঁচি: সকালবেলা হাঁচি বা ঘর পরিষ্কার করার সময় হঠাৎ হাঁচি আসা মানে দেহ ধুলো পার্টিকেল বের করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে যারা ধুলো সংবেদনশীল তাদের জন্য এটি প্রথম সতর্ক সংকেত।

২. নাক বন্ধ বা নাক দিয়ে পানি পড়া: ধুলো কিরা নাকের ভিতরের টিস্যুকে জ্বালা দেয়। ফলে নাক দীর্ঘসময় বন্ধ থাকে বা পানি পড়ে। এই সমস্যা বিশেষ করে ছোট ও আঁটোসাঁটো ঘর, কম বাতাস চলাচলের জায়গায় বেশি দেখা যায়।

৩. চোখ লাল, চুলকানো ও পানি ঝড়া: নাকের সঙ্গে চোখের উপসর্গও সাধারণ। চোখ লাল হওয়া, চুলকানো এবং বেশি পানি পড়া ধুলোর অ্যালার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত।

৪. কাশি ও হুইজিং: শ্বাসপ্রশ্বাসে ধুলো প্রবেশ করলে কাশি বা হুইজিং দেখা দেয়, বিশেষ করে অ্যাজমা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে। বাইরে গেলে উপসর্গ কমে এবং ঘরে গেলে বেড়ে গেলে ধুলোই মূল কারণ।

৫. উপসর্গ বাড়ি বা শোবার ঘরে তীব্র হওয়া: যদি লক্ষণ বাড়ির ভিতরে, বিশেষ করে শোবার ঘরে বেশি হয়, তবে সম্ভবত বিছানা, বালিশ, পর্দা বা কার্পেটে ধুলো কিরার বাসা। এটি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সমাধান: ডা. গ্রোভার ধুলোর অ্যালার্জি কমানোর জন্য কিছু সহজ পদক্ষেপও ভাগ করেছেন:

  • নিয়মিত পরিষ্কার করা: ধুলো যাতে বাতাসে ছড়িয়ে না পড়ে, ভেজা কাপড় বা মপ দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন।
  • প্রতি সপ্তাহে বিছানার চাঁদর পরিবর্তন এবং পরিষ্কার: গরম পানি দিয়ে বিছানার চাঁদর, বালিশ কভার ধুয়ে পুরোপুরি শুকিয়ে নিন। এতে ধুলো কিরা মারা যায়।
  • প্রটেকটিভ কাভার ব্যবহার: অ্যালার্জি-প্রুফ কভার বিছানা ও বালিশে ব্যবহার করলে সংস্পর্শ কম হয়।
  • বাতাসের মান উন্নত করা: ঘর ভালোভাবে বাতাস দিন, সম্ভব হলে এইচইপিএ ফিল্টারযুক্ত এয়ার ক্লিনার ব্যবহার করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কমানো: জিনিসপত্র কম মানে ধুলো জমার জায়গা কম।

ডা. গ্রোভার আরও বলেছেন, উপরোক্ত পদক্ষেপ নিলেও যদি উপসর্গ থাকে, তবে পালমোনোলজিস্ট বা অ্যালার্জিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে ইনহেলার বা অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করে ধুলো অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই উপসর্গগুলোর প্রতি সচেতন থাকলে বছর জুড়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

সর্বশেষে মনে রাখতে হবে, ধুলো কমানো ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা শুধু অ্যালার্জি নয়, স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস এবং জীবনযাত্রার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, ভালো বায়ু চলাচল এবং সঠিক চিকিৎসা একসঙ্গে মেনে চললে ধুলো অ্যালার্জি অনেকটা কমানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *