free tracking

আওয়ামী লীগ ছাড়ার আসল কারণ জানালেন ফজলুর রহমান!

আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি—বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফজলুর রহমানের যাত্রা এক অসাধারণ ও জটিল অধ্যায়। মনোনয়নসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আদর্শ, সিনিয়রিটির প্রশ্ন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক—সব কিছু মিলিয়ে তার দলবদল ছিল বহুস্তর বিশ্লেষণের বিষয়।

ফজলুর রহমান আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন একটি নির্দিষ্ট আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায়। তিনি যে আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, সেখানে শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে। এটি ছিল তার জন্য হতাশাজনক এবং রাজনৈতিকভাবে অপমানজনক এক পরিণতি।

এক সাক্ষাৎকারে ফজলুর রহমান জানান, ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে পাঠান। তখন শেখ হাসিনার একান্ত অনুরোধে ওবায়দুল কাদের তাকে সচিবালয় থেকে বাসায় পৌঁছে দেন এবং সেখান থেকেই তাকে গণভবনে নিয়ে যান। শেখ হাসিনা সেসময় বলেন,”ফজলু, যা হওয়ার হয়েছে, দলে আইসা পড়া।”তবে ফজলুর রহমান সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।

তিনি শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি ১৯৭৬ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং ওবায়দুল কাদের ছিলেন তৃতীয় নম্বর সদস্য। তখন প্রথম ও দ্বিতীয় নম্বর সদস্য ছিলেন ইসমত কাদির গামা ও রবিউল আলম মুকতাদের চৌধুরী।তাই ফজলুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেন,”আমি দল থেকে চলে গেছি, আর আসতে চাই না। আর যদি আসতেই হয়, আপনাকে রাজনৈতিক সিনিয়রিটির প্রটোকল ঠিক করতে হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন,”আমি রাজনীতিতে রক্তের উত্তরাধিকার বিশ্বাস করি না। ৮১ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত আমি সবসময় এই কথাটা বলতাম।”

দীর্ঘ সময় রাজনীতির বাইরে থাকার পর চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে ফজলুর রহমান বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হন এবং খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন, তবে দু’বারই পরাজিত হন।

ফজলুর রহমান জানান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উৎসাহে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী,”আমি যখন কাদের সিদ্দিকীর দলে ছিলাম, তখন বিভেদ হওয়ায় রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। তখন জাফর ভাই বললেন, ‘ফজলু, পলিটিক্স না করলে চলবে না। ছোটখাটো দল না করে মেইনস্ট্রিমে আসো।'”

২০০৮ সালে ফজলুর রহমান, তার স্ত্রী ও ডা. জাফরুল্লাহ মিলে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। ফজলুর রহমান জানান, শেখ হাসিনা তাকে চিনতেন ১৯৮১ সাল থেকেই, যখন তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একমাত্র বক্তা ছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই খালেদা জিয়া তাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন।

ফজলুর রহমানের এই রাজনৈতিক যাত্রা বাংলাদেশে দলীয় রাজনীতির জটিলতা, নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আদর্শ বনাম বাস্তবতার টানাপোড়েনকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, রাজনীতিতে শুধু আদর্শ নয়, সামাজিক সম্পর্ক, মনোনয়ন রাজনীতি ও সিনিয়রিটির মূল্যায়নও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *