পাবলিক স্পিকিং বা জনসমক্ষে কথা বলা দারুণ একটি শিল্প। কিন্তু সবাই কি আর জনসমক্ষে কথা বলতে পারেন? এ ক্ষেত্রে অনেকেই ভয় পান। এই ভয় হচ্ছে উদ্বেগের একটি সাধারণ রূপ। কিছুটা নার্ভাস বোধ করা থেকে শুরু করে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও আতঙ্কও কাজ করে কারও ক্ষেত্রে। এ কারণে অনেকেরই জনসমক্ষে কথা বলার সময় হাঁত কাপে বা কণ্ঠস্বর কাঁপতে থাকে।
জনসমক্ষে কথা বলার চেষ্টা থাকলে যে কেউই তা পারেন। এ জন্য প্রস্তুতি, অনুশীলন ও সমর্থন প্রয়োজন। তাহলে মনের ভেতরের যাবতীয় সব ভয়-ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং কথা বলার জন্য নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে দাঁড় করাতে পারবেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মায়ো ক্লিনিক। তাহলে জেনে নেয়া যাক-
বিষয়বস্ত ভালোভাবে জেনে নেয়া:
প্রথমেই কথা বলার টপিক বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। বিষয়বস্তু যত ভালোভাবে বুঝতে পারা যাবে, তত কথা বলা সহজ হবে। কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে, কোথায় মনোযোগ দিতে হবে, এসব যত জানা থাকবে তত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। যদি ভুলও হয়, তাহলে শিগগিরই আবার সঠিক বিষয়ে ফেরা যাবে। দর্শকরা যেসব প্রশ্ন করবে তার জবাব দেয়ার জন্য কিছু সময় নিতে হবে এবং উত্তর প্রস্তুত রাখতে হবে।
সংগঠিত হওয়া:
আগে থেকেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, ঠিক কী উপস্থাপন করতে চান আপনি। এর জন্য কোনো ধরনের প্রপস বা অডিও-ভিজ্যুয়ালের সহায়তা লাগলে সেসব অন্তর্ভুক্ত করুন। যত বেশি গোছানো থাকবেন, ততবেশি স্নায়ুচাপ কম অনুভব হবে আপনার। এছাড়া ছোট একটি কার্ড বা কাগজে কথা বলার বিষয়বস্তু নোট করে রাখুন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আগে থেকে জায়গাটি একবার পরিদর্শন করুন। সেখানে আপনার ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জামগুলো পরীক্ষা করুন এবং কথা বলার বিষয়বস্তু অনুশীলন করে নিন।
বারবার অনুশীলন করা:
অনুশীলনের বিকল্প নেই। উপস্থাপনার বিষয়বস্তু বারবার অনুশীলন করে নিন। যাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাদের সামনে বিষয়বস্তু কয়েকবার অনুশীলন করে নিন এবং তাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানুন। আবার কয়েকজন অচেনা মানুষের সামনেও অনুশীলন করতে পারেন। সম্ভব হলে নিজের উপস্থাপনা ভিডিও করে তা দেখে ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে উন্নতি করে নিতে পারেন।
উদ্বেগের জায়গা অনুসন্ধান:
কোনো ব্যাপারে যখন দুশ্চিন্তা কাজ করে, তখন সেটি মূলত পরিস্থিতির তুলনায় অনেক বড় কিছু মনে হয় আমাদের কাছে। এ জন্য কোন বিষয়গুলো দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে, তা খুঁজে বের করে লিখে ফেলনু। এবার বোঝার চেষ্টা করুন এবং কী কী হতে পারে বা কী ঘটবে, তার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। যদি থাকেই, তাহলে সেসবও লিখুন। একইসঙ্গে আগের উপস্থাপনাগুলো কেমন হয়েছিল, তা ভেবে দেখতে পারেন।
পজিটিভ ভাবনা:
উপস্থাপনা কেমন হবে, তা ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে পারবেন কিনা, এসব নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিন। মনে করুন, আপনার উপস্থাপনাই সেরা হবে। মনে রাখতে হবে, ইতিবাচক ভাবনা সামাজিক পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ কমায় ও দুশ্চিন্তা হ্রাস করে থাকে।
গভীরভাবে শ্বাস নেয়া:
গভীরভাবে শ্বাস নেয়া হচ্ছে খুবই প্রশান্তিদায়ক কাজ। স্টেজে ওঠার আগে ও বক্তৃতা চলাকালীন দুই বা ততোধিক গভীর ও ধীর শ্বাস নিন। অধিকাংশ সময় উপস্থাপনার শুরুতেই উদ্বেগ বেশি হয় এবং তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই হ্রাস পায়।
দর্শক-শ্রোতার দিকে মনোযোগ না দেয়া:
উপস্থাপনার সময় নিজের বিষয়বস্তুর ওপর মনোযোগ দিন। দর্শক-শ্রোতা কী করছে, বলছে বা ভাবছে, এসবে খেয়াল রাখার প্রয়োজন নেই। মূলত, দর্শক-শ্রোতারা তথ্যের দিকে মনোযোগ দেয়, উপস্থাপনার দিকে নয়। অনেক সময় উপস্থাপক মনে করেন, তার উদ্বেগ হয়তো সামনে থাকা সবাই বুঝে ফেলছেন। কিন্তু বাস্তবে তারা কিছুই বুঝতে পারেন না। এরপরও যদি আপনার মধ্যে চিন্তা থাকে, তাহলে মনে রাখবেন- দর্শক-শ্রোতারা আপনার উদ্বেগ বা ভয়-ভীতি বুঝতে পারলেও অধিকাংশ সময় আপনাকে উপস্থাপনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেবেন।
নীরবতাকে ভয় নয়:
উপস্থাপনার সময় হঠাৎ করেই যদি ভুলে যান, আপনি ঠিক কী বলছিলেন বা কিছু মনে নেই, তাহলে উদ্বেগের কিছু নেই। এই সময়টুকু আপনার কাছে দীর্ঘ মনে হলেও বাস্তবে তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের হবে। যদি এর থেকেও বেশি সময় বিরতি নেন, তাহলে দর্শক-শ্রোতারা মনে করবে আপনি বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। এ জন্য কখনো নীরবতা ভয় পাওয়া যাবে না। বরং ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে উপস্থাপনা চালিয়ে যেতে হবে।
সফলতা উদযাপন:
নিজের সফলতা উদযাপন করতে হবে। উপস্থাপনার পর নিজেকে অভিনন্দন জানান। হয়তো উপস্থাপনা নিখুঁত না হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে। আর আপনি নিজের ওপর যতটা কঠোর হন, শ্রোতারা কিন্তু ততটা কঠোর নয়। সবশেষ উপস্থাপনায় যেসব ক্ষেত্রে ভয় ছিল, সে রকম নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা ভেবে দেখুন। সবসময় মনে রাখবেন, ভুল হতেই পারে। যা আপনার ভবিষ্যতের দক্ষতা উন্নত করতে সহায়ক।
সহায়তা নেয়া:
উদ্বেগের জায়গা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অন্যদের সহায়তা নিতে হবে। এ জন্য আপনি এমন একটি গ্রুপে যোগ দিন, যেখানে জনসমক্ষে কথা বলার সমস্যায় ভোগা মানুষদের সহায়তা করা হয়। টোস্টমাস্টারস ইন্টারন্যাশনাল সে ধরনের একটি সংস্থা। অলাভজনক এই সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে শাখা পরিচালনা করে এবং ভালোভাবে কথা বলা ও নেতৃত্ব দেয়ার প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
Leave a Reply