দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুসংহত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বেসামরিক প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সহায়তা এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চলমান ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন ও প্রশংসনীয় অবদানের জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একই সাথে, তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আগামী মাসগুলোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা আরও সুসংহত করা প্রয়োজন। এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কমান্ড কাঠামো এবং সকল বাহিনীর মধ্যে নিবিড় সমন্বয় নিশ্চিত করার উপর তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস জাতির কাছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার তার “সুদৃঢ় অঙ্গীকার” পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই নির্বাচন ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি, নতুন এবং নারী ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন এবং সর্বোপরি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তার এই বক্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, প্রধান উপদেষ্টার কথায় আশ্বস্ত হয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্যে মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানান, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সেনাপ্রধান আরও দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, “সরকারের সকল উদ্যোগ এবং কর্মসূচি সফল করতে সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তার এই বিবৃতি দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবিচল সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে সরকার ও সামরিক বাহিনীর এই ধরনের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক ও পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই আলোচনাগুলো আগামীতে একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Leave a Reply