free tracking

স্তন ক্যান্সার: প্রাথমিক ধাপেই চিনে নিন ৫টি লক্ষণ ও পরীক্ষার সময়!

বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। সময়মতো শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর হয়। তাই ঘরোয়া ভাবে স্তন পরীক্ষা করা নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হতে পারে, যা প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সারের লক্ষণ ধরতে সাহায্য করে।

এখানে স্তন ক্যান্সার শনাক্তে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করার ৫টি কার্যকর পদ্ধতি এবং এগুলো করার উপযুক্ত সময় দেওয়া হলো।

১. আয়নায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টিপাত (Visual Inspection)

প্রথম ধাপে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে (উর্ধ্বাংশে পোশাক ছাড়া) স্তনের আকৃতি, আকার ও সামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ করুন। বাহু স্বাভাবিকভাবে শরীরের পাশে রাখুন এবং খেয়াল করুন—

  • আকারে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না
  • ত্বকে কোনো গর্ত, রক্তচাপ, ফোলাভাব বা লালচে ভাব আছে কি না
  • স্তনে কোনো দৃশ্যমান গাঁঠ বা ফোলা দেখা যাচ্ছে কি না

এরপর, বাহু দুটো মাথার উপর তুলুন এবং আবারও স্তন দুটি ভালোভাবে দেখুন। অতিরিক্ত পরীক্ষা করার জন্য, দুই হাত কোমরে রেখে বুকের পেশি টানুন। এই অবস্থায় স্তনের গঠন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিপল (বোঁটা) ভিতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে কি না বা অস্বাভাবিক কোনো তরল নিঃসরণ হচ্ছে কি না, তা লক্ষ্য করুন।

২. শুয়ে পড়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা (Manual Palpation While Lying Down)

শুয়ে পড়লে স্তনের টিস্যু ছড়িয়ে পড়ে, ফলে স্পর্শের মাধ্যমে পরীক্ষা সহজ হয়। এই পদ্ধতিতে:

  • আপনার তিনটি আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে ছোট ছোট বৃত্তাকার ঘর্ষণ দিন
  • স্তনের প্রতিটি অংশ ও কাঁধের নিচে (আরমপিট) পর্যন্ত পরীক্ষা করুন
  • স্তনটিকে কল্পনায় ঘড়ির মতো ভাগ করে (যেমন: ১২টা, ৩টা, ৬টা…) প্রতিটি সেকশনে চাপ দিন

চাপের স্তর তিনটি রাখুন: হালকা, মাঝারি ও গভীর—যাতে সব স্তর স্পর্শ করা যায়। কোনো গাঁঠ, শক্ত অংশ বা ঘন টিস্যু অনুভব করলে খেয়াল করুন। হালকা চাপে নিপল চেপে দেখুন, কোনো নিঃসরণ হচ্ছে কি না। উল্টো হাত ব্যবহার করে অপর স্তনের একইভাবে পরীক্ষা করুন।

৩. গোসলের সময় পরীক্ষা (Breast Exam in the Shower)

অনেক নারীর জন্য ভেজা ও স্লিপারি অবস্থায় পরীক্ষা করাটা আরও সহজ হয়। স্নানের সময়:

  • এক হাত মাথার উপর তুলুন
  • অন্য হাতের আঙুলের প্যাড ব্যবহার করে স্তন ও আর্মপিট অঞ্চল স্পর্শ করুন
  • ছোট ছোট বৃত্তে ঘোরাতে ঘোরাতে হালকা থেকে মাঝারি চাপ দিন

গরম পানি ও ভেজা ত্বক এই সময়ে টিস্যু অনুভব করতে সহায়ক হয়। এটি একটি সহজ ও দৈনন্দিন উপায়ে স্তন পরীক্ষা করার উপযোগী সময়।

৪. নিপলের পরিবর্তন ও নিঃসরণ পরীক্ষা (Nipple Changes and Discharge)

নিপল বা স্তনবোঁটার ক্ষেত্রে আলাদা করে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। পর্যবেক্ষণ করুন:

  • নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে কি না
  • রঙ বা অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কি না
  • কোনো ধরনের তরল বের হচ্ছে কি না (যেমন: স্বচ্ছ, রক্তমিশ্রিত বা অন্য রঙের)

নিপলে হালকা চাপ দিলে যদি কোনো তরল বের হয়, তাহলে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হতে পারে। স্তন ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য স্তনের রোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেকোনো অস্বাভাবিক নিপল পরিবর্তন বা নিঃসরণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. স্তন পরীক্ষা কখন করবেন? (Best Time to Perform Self-Exam)

স্তন নিজের হাতে পরীক্ষা করার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মাসিক চক্র অনুযায়ী স্তনের গঠন ও সংবেদনশীলতা পরিবর্তিত হয়।

  • যারা মাসিক হয়: মাসিক শুরুর ৭ থেকে ১০ দিন পর (যখন স্তন তুলনামূলকভাবে নরম ও কম সংবেদনশীল থাকে)
  • যাদের মাসিক হয় না: প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে নিন, যেমন মাসের ১ তারিখ

প্রতিমাসে নিয়মিত পরীক্ষা করলে, আপনি নিজের স্তনের স্বাভাবিক অবস্থা ভালোভাবে জানতে পারবেন এবং যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা নারীদের জন্য একটি শক্তিশালী অভ্যাস হতে পারে। এটি স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি অংশ, যা ভবিষ্যতে জটিল রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। কোনো অস্বাভাবিকতা বা সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *