free tracking

মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে কী ঘটে, জট খুললো হাজার বছরের রহস্যের!

মৃত্যু মানুষের জীবনের এক অবশ্যম্ভাবী সত্য। তবে মৃত্যুর ঠিক আগে মানবমস্তিষ্কে কী ঘটে-এই প্রশ্ন যুগের পর যুগ বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ সবাইকে ভাবিয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণা সেই রহস্যের কিছুটা পর্দা উন্মোচন করেছে, যা মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

‘Enhanced Interplay of Neuronal Coherence and Coupling in the Dying Human Brain’ শিরোনামের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Frontiers in Aging Neuroscience জার্নালে। সেখানে মৃত্যুর আগে ও পরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী ড. আজমল জেমার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিলের সঙ্গে যুক্ত, বলেন—‘মৃত্যুর ঠিক আগের সময় মস্তিষ্ক যে ধরনের তরঙ্গ তৈরি করে, তা স্মৃতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এটি অনেকটা সেই অভিজ্ঞতার মতো, যা প্রায়-মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা মানুষরা জানান—জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত চোখের সামনে দ্রুত ভেসে ওঠে।’

গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ৮৭ বছর বয়সী এপিলেপসি রোগীর মৃত্যু পর্যবেক্ষণ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। তার মাথায় বসানো বিশেষ যন্ত্র মৃত্যুর আগে ও পরের প্রায় ১৫ মিনিটের (৯০০ সেকেন্ড) মস্তিষ্কতরঙ্গ রেকর্ড করে। বিশেষ করে হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার ৩০ সেকেন্ড আগে ও পরে মস্তিষ্কে নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করেন গবেষকরা।

ফলাফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের ব্রেইন ওয়েভ বা তরঙ্গ যেমন গামা, ডেল্টা, থিটা, আলফা ও বিটায় পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে গামা তরঙ্গ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, যা উচ্চ-স্তরের জ্ঞান, স্মৃতি এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা স্মরণ করার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে ডেল্টা ও থিটা তরঙ্গ সাধারণত গভীর নিদ্রার সময় সক্রিয় থাকে, আর আলফা ও বিটা তরঙ্গ সচেতন চিন্তা ও মনোযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এই গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করে যে, মৃত্যুর একেবারে শেষ মুহূর্তে মানুষ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলো আবারও স্মরণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে প্রচলিত ধারণা নতুন করে ভাবতে হবে।

ড. জেমার বলেন, ‘আমাদের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী কখন জীবন শেষ হয়, এই গবেষণা তা চ্যালেঞ্জ করছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক প্রশ্নও যেমন অঙ্গদানের সঠিক সময় কখন তা নির্ধারণ করা উচিত।’

উল্লেখ্য, এই গবেষণার ফলাফল প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে। তবে সম্প্রতি এটি আবার অনলাইনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গবেষণা মৃত্যুর রহস্য বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনুসন্ধানে প্রেরণা জোগাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *