রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সেখানে ঘটে গেছে এক নজিরবিহীন ঘটনা। জনতার তীব্র ক্ষোভে মুহূর্তেই ভেঙে ফেলা হয় কাবা শরীফের আদলে তৈরি নুরুল হক ওরফে নূরা পাগলার কবর। পরে মরদেহ টেনে বের করে এনে রাস্তায় আগুনে পোড়ানো হয়। এই ঘটনা মুহূর্তেই দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—কে এই নূরা পাগলা? কেন তিনি এত বিতর্কিত হয়ে উঠলেন?
১৯৮০’র দশকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে গড়ে তোলেন “দরবার শরীফ”। সেখানেই বানান নতুন কালেমা—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মাহদী রাসুলুল্লাহ। পবিত্র কোরআনকে পদদলিত করে তিনি বলতেন ভোজপাতা, এমনকি আযানের বাণী বিকৃত করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই আলেমসমাজে তার এসব কর্মকাণ্ড ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
তবু এক শ্রেণীর অনুসারীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নূরা পাগলা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার প্রভাব গ্রাম-গঞ্জ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর পরও থেমে যায়নি তার উত্তরাধিকারীদের কার্যকলাপ। তার ছেলে নূরজ নোভা ও অনুসারীরা এখনও ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দরিদ্র মানুষদের টাকা-পয়সার প্রলোভন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসলাম থেকে সরিয়ে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত করার খবরও উঠে এসেছে।
গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নূরা পাগলা। তার ভক্তরা বিশেষ কায়দায় কবর নির্মাণ করে সেটিকে “ইমাম মাহদীর কবর” বলে প্রচার করে। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনকে জানানো হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনতা। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার জুমার নামাজের পরই ঘটে যায় সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
এ নিয়ে আলেমদের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। হেফাজতে ইসলামের নেতা শায়েখ হারুন বলেন, নূরা পাগলার কর্মকাণ্ড ছিল শিরক ও বিদআতের চরম রূপ। জনতার প্রতিবাদ ন্যায্য হলেও মরদেহ পোড়ানো ইসলামী শরীয়তসম্মত নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে উত্তপ্ত বিতর্ক। কেউ বলছেন প্রশাসনের উদাসীনতা এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছে, আবার কেউ মনে করছেন উত্তেজনায় সীমা লঙ্ঘন করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে অনেকেই বলছেন, নূরা পাগলার অপকর্মেরই কর্মফল যেন প্রতিফলিত হয়েছে তার মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায়।
Leave a Reply