ইসরায়েলের সাম্প্রতিক দোহা হামলার প্রতিবাদে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর নেতারা কাতারের রাজধানী দোহায় জড়ো হয়েছেন। ইসরায়েল এই হামলার কারণ হিসেবে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল দোহায় হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হামলায় পাঁচ হামাস সদস্য ও এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। হামলার সময় হামাস সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর দাবি করেছিলেন, হামাসের হাতে আটক ৪৮ জন বন্দীর বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির ট্রাম্পের প্রস্তাব ইসরায়েল মেনে নিয়েছে।
হামলার পর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই হামলার নিন্দা জানায়।
ইসরায়েলের এই ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ প্রতিবাদে একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য কাতার আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর নেতাদের এই জরুরি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে চূড়ান্ত প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানি বলেছেন, এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাতার একটি সম্মিলিত জবাব খুঁজবে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। কাতার বরাবরই ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ঐক্য গড়ার চেষ্টা করে আসছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্র এবং আরব লীগের ২২টি সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। এতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই সম্মেলন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বিবৃতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নেতারা ইসরায়েলের আগ্রাসন মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল গাজায় হামলার পাশাপাশি ইরান, সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার ফলে কাতার ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়েছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুধু অস্ত্র কেনার বাইরে নতুন কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যদিও ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে, তবে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে একটি বড় বাধা তৈরি করেছে।
Leave a Reply