বুকে ব্যথা নেই মানেই হার্ট ভালো আছে এমন ধারণা এখন আর নিরাপদ নয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক একেবারেই “নীরব ঘাতক”। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা, যা চুপিসারে বাড়তে বাড়তে একসময় রক্তনালিকে আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। এর ফলেই হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গিয়ে ঘটতে পারে প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাক।
তবে বিপদ আসার আগেই শরীর কিছু সংকেত দেয়। সেগুলো সঠিক সময়ে চিনতে পারলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোলেস্টেরল জমে হার্টের রক্তনালিতে সমস্যা তৈরি হলে শরীর সাধারণত যেভাবে সতর্ক করে-
১. বুকের চাপ বা জ্বালাভাব
বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে ভারীভাব বা জ্বালা অনুভব করা, যা কাজের সময় বাড়ে এবং বিশ্রামে কিছুটা কমে—এটি রক্ত চলাচলে বিঘ্নের ইঙ্গিত। অনেকেই ভুল করে একে অ্যাসিডিটি মনে করেন।
২. সহজে শ্বাসকষ্ট হওয়া
সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে বা হালকা পরিশ্রমেই দম বন্ধ হয়ে আসা অবহেলা করার মতো নয়। রক্তনালি সরু হয়ে গেলে হৃদযন্ত্র পর্যাপ্ত রক্ত পায় না, ফলে ফুসফুসেও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
৩. অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
আগে যেসব কাজ সহজ লাগত, এখন তা করতে গেলেই ম্যাজম্যাজ ক্লান্তি—এটি নিছক বয়স নয়। কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ধীর হয়ে গেলে শরীরে শক্তি পৌঁছায় কম, ফলে দ্রুত ক্লান্তি আসে।
৪. মাথা ঘোরা বা বমি ভাব
রক্ত ও অক্সিজেন কম পৌঁছালে মস্তিষ্কও প্রভাবিত হয়। এতে মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি ভাব বা মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
৫. হাত-পায়ে ঠান্ডা বা ঝিনঝিনে অনুভূতি
রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে হাত-পায়ে অস্বাভাবিক ঠান্ডা লাগতে পারে। কখনো ঝিনঝিনে বা অসাড়ভাবও দেখা দেয়, যা নিয়মিত হলে চিন্তার কারণ।
৬. ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা হঠাৎ ঘাম
রাতে ঘুম থেকে উঠে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া কোলেস্টেরল জমার বড় অশনিসংকেত। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
যাদের রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরল বেশি, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, কিংবা পারিবারিকভাবে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে-তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই ৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষত লিপিড প্রোফাইল করানো জরুরি।
করণীয় কী? অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট এড়িয়ে চলুন,নিয়মিত ব্যায়াম করুন,ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন,ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন,প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিন।
হৃদরোগ হঠাৎ আঘাত হানে না, বরং ধীরে ধীরে তৈরি হয়। তাই শরীরের ছোট ছোট সংকেতগুলোকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দিন। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে কেবল জীবনই বাঁচবে না, সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনযাপনও নিশ্চিত হবে
Leave a Reply