ছাত্র ও জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর ভয়াবহ বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ নেতারা। অনেকেই এখন সুযোগ বুঝে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। এরইমধ্যে অনেকে দেশ ছেড়েছেনও। অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাণ রক্ষার ভয়ে। তাদের কেউ কেউ আবার আশ্রয় চেয়েছেন বিভিন্ন দূতাবাসে।
সোমবার দুপুর আড়াই টার দিকে ভারতের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার এমন সিদ্ধান্ত আঁচ করতে পেরে আগেই পালিয়েছেন অনেক এমপি, মন্ত্রী ও মেয়র। কিন্তু যারা আঁচ করতে পারেননি তারা এখন মহাবিপদে। বাসায় নেই, কোথায় আছেন জানেন না কেউ। বন্ধ মোবাইলও।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও দেখা যাচ্ছে না গত রোববার থেকে। তিনটি সূত্র থেকে তিন ধরনের সূত্র পাওয়া গেছে। দুটি সূত্র বলছে, তিনি পালিয়েছেন রোববার রাতেই। কেউ বলছে দিল্লি, কেউ আবার সিঙ্গাপুরের কথা বলছে। কিন্তু একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তিনি দেশেই আছেন।
কোটা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন থেকেই শেখ হাসিনা তথা গণভবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ফলে তিনিও জানতেন না, মূলত কী হতে যাচ্ছে। গুঞ্জন ছিলো তাকে বাদ দেওয়া হবে। তখন থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দেশেই আছেন, কীভাবে আছেন তা নিশ্চিত করতে পারছেন না কেউ।
মধ্যস্তরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, রোববার রাত থেকেই পরিচিত এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। অনেকের মুঠোফোন বন্ধ ছিলো।
বিশেষ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তবে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, গোলাম দস্তগীর গাজী, শেখ ফজলে নূর তাপস বিমান যোগে দেশ ছাড়েন। তবে তারা কোন দেশে গেছেন তা জানা যায়নি।
রোববার রাতে ড. হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা একে৫৮৬ নম্বর ফ্লাইট যোগে দেশ ত্যাগ করেন। তাদের গন্তব্য স্থান ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দর।
সূত্রগুলো বলছে, এরপরই মূলত এমপি-মন্ত্রীদের অনেকে শেষ মুহূর্তে শত চেষ্টা করেও আর দেশ ত্যাগ করতে পারেননি। রোববার ও সোমবার তারা টিকিটের জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে যোগাযোগ করলেও টিকিট পাননি। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে বিদেশে পাঠাতে পারলেও নিজে আর যেতে পারেননি। এদের মধ্যে ডা. হাছান মাহমুদ, কর্নেল ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রাজ্জাক কয়েকটি দূতাবাসে আশ্রয় চেয়ে যোগাযোগ করেন বলে জানা গেছে।
তবে মোহাম্মদ আলী আরাফাত দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা যায়।
এরই মধ্যে দুপুরে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিকেলে এই বিমানবন্দর থেকে হাছান মাহমুদকেও আটক করা হয়।
গত সোমবার ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বনানীর বাসায় অবস্থান করছিলেন। সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর থেকে তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তবে একজন মন্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি বাসায়ই আছেন, নিরাপদে আছেন। সময় সুযোগ বুঝে তিনিও হয়তো পাড়ি দিবে লন্ডনে।
Leave a Reply