শেখ হাসিনার পতনের আগের রাতে কী কথা হয় সেনাবাহিনীর মধ্যে?

গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে হেলিকপ্টারে করে ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি। তবে তার এই পতনের আগের রাত অর্থাৎ রোববার রাতে সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়। এই অনলাইন বৈঠকে সেনাপ্রধান ছাড়াও ছিলেন অন্য সামরিক কর্মকর্তারা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হলেও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাবেন না সেনা সদস্যরা। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা বিষয়টি রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

বৈঠকের পর এই বার্তা নিয়ে শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি শেখ হাসিনাকে জানান, সারাদেশে কারফিউ জারি করা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না সেনারা। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রয়টার্স বলছে, বার্তাটি পরিষ্কার ছিল। ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার আর সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না।

গত রোববার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ থেকে সৃষ্ট সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছে। এরপর সারাদেশে কারফিউ জারি করে সরকার। তবে সেদিনই সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন সেনা কর্মকর্তারা।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রোববার সন্ধ্যায় তাদের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, সেটি ছিল নিয়মিত বৈঠক। যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপডেট নিতে এই বৈঠক হয়।

এ বিষয়ে জানতে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

শেখ হাসিনার পতনের আগের সবশেষ ৪৮ ঘণ্টা কেমন ছিল, সে বিষয়ে একটা ধারণা পেতে বাংলাদেশের গত এক সপ্তাহের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত এমন ১০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তাদের মধ্যে চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং দুজন জ্ঞাত সূত্র রয়েছে। তবে বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় তারা সবাই নাম না প্রকাশ করার শর্তে কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে তেমন কিছু জানাননি সেনাপ্রধান। তবে তিনজন সাবেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা এবং অন্তত ২৪১ জন নিহত হওয়ার কারণে যেকোনো মূল্যে হাসিনাকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেনাদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। সেটি সম্ভবত সেনাপ্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ সেনারা ছাউনির বাইরে অবস্থান করছিল। দেশে কী ঘটছে তারা তা দেখছেন।

সোমবার গণভবনেই ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে কারফিউ থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। তাই পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রী সোমবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এমনটা জানান ভারতীয় এক কর্মকর্তা ও দুজন বাংলাদেশি নাগরিক।

রয়টার্স বলছে, এ সিদ্ধান্তের পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে তারা ভারতের উদ্দেশে রওনা হন।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) পার্লামেন্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর জানান, গত জুলাই মাস থেকেই সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানায় নয়াদিল্লি। তবে কারফিউ উপেক্ষা করে সোমবার ঢাকায় ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে তিনি ভারতে আসার জন্য অনুমোদনের অনুরোধ করেন।

আরেকজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, কূটনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে জানানো হয়, তিনি ভারতে সাময়িকভাবে থাকতে পারবেন। বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এমন ভয়ে এই কথা জানায় ভারত সরকার। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *