প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাবার কারণ ও প্রতিকার!

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মাঝে অনেকেই প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হয়ে থাকে। যা একদমই অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ কেউ চায় না তার তার সন্তানটি কোনো প্রকার ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসুক।

এদিকে সময়ের প্রয়োজনে মানুষকে প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে জানতে হচ্ছে। কারণ সমাজের যে ক্ষুদ্র অংশ প্রতিবন্ধী তাদের বাদ দিয়ে বা অবহেলা করে সমাজে উন্নতি করা সম্ভব নয়।

এক সময় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের পাগল বলে হিসেবের বাইরে রাখা হতো। চিকিৎসা, শিক্ষা ও সুরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হতো। তার প্রতিবন্ধিতা যাতে অন্যদের কাছে প্রকাশ না পায় তার জন্য তাকে বাইরের পরিবেশ থেকে আলাদা করে ঘরবন্দি রাখা হতো। আর সে কারণে প্রতিবন্ধী শিশুটি আরো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বেড়ে উঠতো। তাদের কখনও পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার দেওয়া হতো না।
আমাদের সমাজে নারী প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো খারাপ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। একটু সচেতন হলে, শিশুর জন্মের পরই যদি প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা যায় তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কিছু প্রতিবন্ধিতা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।

অটিজম বা প্রতিবন্ধী কী কারণে হয় এটি সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেয়ার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। নানান কারণে শিশু অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী হতে পারে। এর মধ্যে কিছু জেনেটিক এবং কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে। যদি একটু সতর্ক হওয়া যায় এবং কিছু নিয়ম নিতি মেনে চলা হয় তবেই এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যায়।

আসুন জেনে নেয়া যাক প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাবার কিছু প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাবার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে-

প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাবার কারণ

(১) গর্ভাবস্থায় শিশুর মা যদি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নানা প্রকার ঔষধ খেতে থাকে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক ঔষধ ভ্রুনের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাঁধার সৃষ্টি করে ফলে শিশু যেকোনো ধরনের বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।

(২) মা যদি গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে শিশুর অক্সিজেনের অভাব ঘটতে পারে, ফলে শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

(৩) গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে মা যদি যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, জার্মানহাম, চিকেনপক্স, মাম্পস, রুবেলা ভাইরাস, এইডস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশুর উপর তার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। এর ফলে শিশু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা প্রভৃতি শারীরিক অবস্থায় গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।

(৪) মায়ের বয়স যদি খুব অল্প হয় অথবা খুব বেশি হয় অর্থাৎ যদি ৪০ বছরের বেশি হয় তাহলে শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি থেকেই যায়।

(৫) শিশু জন্মের সময় মাথায় জোড়ে আঘাত পেলে সেই শিশু হতে পারে প্রতিবন্ধী। শিশু ছোটো বেলায় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলেও সমান সমস্যা হতে পারে।

(৬) মা যদি Rh পজেটিভ আর বাবা যদি Rh নেগেটিভ হয় তা হলে গর্ভস্থ সন্তানের Rh পজেটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে। মা ও সন্তানের Rh উপাদানের মধ্যে যদি মিল না থাকে তবে তাকে Rh অসংগতা Rh Incompatibility বলা হয়। এতে মৃত সন্তান হয়। আর যদি শিশু বেঁচে যায় তাহলে মস্তিস্কের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়।

প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতায় অটিজম হওয়ার শংকা বেড়ে যায় বলে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সুষম খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক নানান রকম ভিটামিন মিনারেল সেবন, যেমন ফলিক এসিড, আয়রন, নুন্যতম চারবার শারীরিক চেক আপ এর মাধ্যমে নবজাতকের অটিজম হবার আশংকা বহুলাংশে কমানো যায়।

প্রতিবন্ধিতা রোধ করতে হলে গর্ভকালীন সময় ওষুধ গ্রহণে সতর্কতা থাকতে হবে। প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করতে হবে এবং জন্মের পর শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুকে লালন-পালন করতে হবে। বেশি বয়সে সন্তান ধারণ রোধ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *