যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, সে দায় আমার: সেনাপ্রধান

“যারা এ সমস্ত অপরাধ করেছে, তাদের আমরা ছাড় দেব না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন ওয়াকার-উজ-জামান।

তুমুল গণ আন্দোলন ও সংঘাতের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে নৈরাজ্য ও সহিংসতার ঘটনায় সাধ্যমত চেষ্টা করার কথা বলেছেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

তবে চেষ্টার পরও কোনো ব্যর্থতা থাকলে সে দায় নিজে নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

বুধবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে সেনাসদরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের আমি বলেছিলাম আমাদের সহযোগিতা করতে। কারণ যে মুহূর্তে এই ট্রানজিশন হবে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ওনারাও আমাকে বলেছিলেন সহযোগিতা করবেন। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু জায়গায় এসব ঘটনা ঘটেছে।

“ঘটনা ঘটার পেছনে কিছু কারণও আছে। প্রথমে এসব ঘটনা ঘটেছে, এখন পরিস্থিতি অনেক শান্ত হয়ে এসেছে।”

রাজনীতিবিদদের অনুরোধে দায়িত্ব নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েছি, আর তো কেউ নেওয়ার নাই। যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, সেই দায়-দায়িত্বও আমার।

“আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। খুব কম সময়ের মধ্যে একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরত আসছে। আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হচ্ছে। আমাকে একটু সময় দেন, ইনশাল্লাহ আমরা স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারব।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ে অসহযোগের দ্বিতীয় দিন ছাত্র-জনতার ঢাকার রাজপথ দখলের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।

এ খবর সোমবার দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নগরীতে প্রকাশ্যে পুলিশের সংখ্যা কমতে থাকে; মঙ্গলবার শুধু রাজধানীতে নয় প্রায় পুরো দেশেই পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে দেখা যায়। থানায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়াসহ দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

দুই দিন পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সড়কে নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। পরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও থানার নিরাপত্তায় আনসার নামানো হয়।

নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে কাজ করলেও পুলিশ না থাকায় সে ‘শূন্যতা পূরণ হয়নি’ বলে মনে করছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

তিনি বলেন, “পুলিশ কিন্তু কোনো ডিউটিতে নেই। সেনাবাহিনীর স্ট্রেনথ দিয়ে সেটা পূরণ করা সম্ভব না। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার জানা মতে, বহু পুলিশ, অনেক থানা তারপরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেসকিউ করার কাজগুলো আমরা করেছি। বিমানবন্দর, ডিপ্লোমেটিক এরিয়া, সচিব-বিচারকদেরদের বাসস্থান আমরা প্রটেক্ট করছি। বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোলিং করছি আমরা।

“তারপরেও প্রথমে দুয়েক জায়গায় এটা হয়েছে। সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও বিব্রত। আমার যে স্ট্রেনথ ছিল, নেভি ও এয়ারফোর্সও তাদের মত করেছে।”

পুলিশ পুর্নগঠিত হয়ে কাজে ফিরলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

সেনাপ্রধান বলেন, “পুলিশের এত বিরাট ফোর্স নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পক্ষে সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আমরা আনসার-বিএনসিসিকে কাজে লাগিয়েছি, ছাত্ররাও কাজ করেছে। আমাদের মিলিটারির সকল ফোর্স কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এখন এই ঘটনাগুলো কমে এসেছে।

“পুলিশের পুনর্গঠনের কাজ চলছে। একজন পুলিশ প্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, পুলিশের মনোবল ফেরত আসবে। পুলিশও ভালোভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।”

নৈরাজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “তবে যারা এ সমস্ত অপরাধ করেছে, তাদের আমরা ছাড় দেব না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার সাথে বিমানবাহিনিী ও নৌবাহিনীর প্রধান রয়েছেন। আমরা এক সাথে কাজ করছি।”

বির্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর‌্যায়ে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় হওয়ার কথা জানান তিনি।

“আমরা হয়ত রাত রাত ৮টায় করতে পারি। হয়ত ৪০০ জনের উপস্থিতি এখানে থাকবে।”

গুজবে কান না দেওয়ার জন্যও জনগণকে অনুরোধ জানান তিনি।

“একটি চমৎকার পরিবেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেনাবাহিনী নিয়ে, সেনানিবাসে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে বলে গুজব রটনা হচ্ছে। এসবে আপনারা কান দেবেন না। এগুলো ছড়ানো থেকে আপনারা নিবৃত্ত থাকবেন। নিশ্চিত না হয়ে এসব খবর দেওয়া দেবেন না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *