‘বাবা আমার লাশটা নিয়া যাইও’

নাফিসা হোসেন মারওয়া। বয়স ১৭। চলতি বছর টঙ্গীর শাহাজ উদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। নাফিসা রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনে যোগ দেয়। বাবা বিষয়টি জানতে পেরে নাফিসাকে নিষেধ করেন। গত ১ আগস্ট নাফিসা চলে যায় সাভারের বক্তারপুর এলাকার মামার বাড়িতে। সেখান থেকে ফের যোগ দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন নাফিসা।

গুলি লাগার পর নাফিসা তার বাবাকে ফোনে বলেন, ‘বাবা আমার লাশটা নিয়া যাইও, আমি মইরা যামু’। এ সময় গুলিবিদ্ধ নাফিসাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অন্য শিক্ষার্থীরা। পরে খবর পেয়ে তার বাবা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে আসেন টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায়। রাতেই লাশ দাফন করা হয় এলাকার স্থানীয় গোরস্থানে।

এদিকে, নাফিসার মৃত্যুর পর বাবা আবুল হোসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন কবরের পাশে। মেয়ের প্রিয় জবা ফুল এনে জড়ো করছেন কবরের পাশেই। কখনো কখনো চিৎকার করে কেঁদে উঠেন।

নাফিসার বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমার দুইটা মেয়ে। নাফিসা বড়। আমি গরিব। কষ্ট করে মেয়েদের লেখাপড়া চালাইতাম। ওদের মা বিদেশে গেছে। আমার কোনো জমি নেই। দুইটা মেয়েই আমার সম্বল ছিল। আন্দোলন তো থামল। আমার মেয়ে তো আইলো না। গুলি লাগার পর আমার মা (নাফিসা) ফোনে আমারে বলছে- বাবা আমার লাশটা নিয়া যাইও, আমি মইরা যামু।

জানা যায়, নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় একজন চা দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে বাবা আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকার আট নাম্বার ব্লকে একটি ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে কয়েক বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান নাফিসার মা কুলসুম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *