তরুণদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকায় পৌঁছে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, এ স্বাধীনতাকে আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যে তরুণ সমাজ এটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা এ দেশকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এ স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
জনসাধারণকে সংখ্যালঘুদের ওপরসহ প্রতিটি হামলা বন্ধে তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন দেশের মানুষের ওপর কোথাও হামলা হবে না। আমার প্রথম কথা হলো আপনারা বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।
নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো সরকারের কাঠামোগুলো পরিবর্তন করা, মানুষকে রক্ষা করা। মানুষ যাতে সরকারের ওপর আস্থা রাখে। বাংলাদেশ একটি পরিবার, সম্পদ-জনগণ সবই আমাদের। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।
আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। যে আবু সাঈদের ছবি মানুষের মনে গেঁথে গেছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কি অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। তারা বলেছে যত গুলি মারুক, মারতে পারে, আমরা আছি। যার কারণে সারা বাংলাদেশজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করলো। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৩ বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক আসিফ নজরুল ছাড়াও ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ তার বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
এ ছাড়াও নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদকে বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। একই দিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে তারা ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। রাত ৮টার দিকে এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বুধবার সেনা সদর দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবার সম্মতিক্রমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৫ জন সদস্য থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply