হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য: ভারত-যুক্তরাজ্য ছাড়াও যেসব দেশের নাম শোনা যাচ্ছে!

তিনদিন আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দিল্লির একটি নিরাপদ বাড়িতে আছেন তিনি। ভারত তাকে আশ্রয় দিলেও স্থায়ীভাবে রাখতে চাইছে না। তাই ঢাকা ছেড়ে সেখানে আশ্রয় নেয়ার পরপর তার পরবর্তী গন্তব্য কোন দেশ হবে, সেটা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। প্রথমে যুক্তরাজ্যের নাম শোনা গেলেও সেখান থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই হাসিনা এখন ভিন্ন কোনো দেশের কথা চিন্তা করছেন।

যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন কি হাসিনা?

শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ এবং কেয়ার স্টারমার সরকারের একজন মন্ত্রী। এ এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ এই উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নেতাকে আশ্রয় দেয়ার নজির রয়েছে। তাই ঢাকা ছাড়ার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল শেখ হাসিনাও তাদের পথ অনুসরণ করে যুক্তরাজ্যে গিয়ে উঠবেন।

তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এনডিটিভিকে জানান, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য দেশটিতে যেতে পারবেন না।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার তৃতীয় দিনে মুখ খুললেন সায়মা ওয়াজেদ

ওই কর্মকর্তা বলেন, সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে এমন মানুষকে আশ্রয় দেয়ার গর্বিত রেকর্ড রয়েছে যুক্তরাজ্যের। তবে কাউকে আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করার অনুমতি দেয়ার কোনো বিধান নেই।

যুক্তরাষ্ট্র কি গন্তব্য হতে পারে?

শেখ হাসিনার ছেলে জয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। কিন্তু হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। তাই তার সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সবশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কিত এই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন হাসিনা। তবে এই নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এই নির্চাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করে দেশটি।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর খবর বের হয় যে তার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি জো বাইডেন প্রশাসন।

ভারতই কি হাসিনার শেষ ভরসা?

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে এখন ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশের পার্লামেন্টে জানান, শেখ হাসিনা খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন চেয়েছিলেন।

জয়শঙ্কর বলেন, হাসিনা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাকে ধাতস্থ হতে সময় দিয়েছে ভারত। আপাতত ভারত হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায়। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানাবেন। সেই ভাবনা-চিন্তার জন্য সময় নিচ্ছেন। হাসিনার পরিকল্পনা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন বেশ বেকায়দায় পড়েছে ভারত। তাকে প্রকাশ্যে আর সমর্থন দিতে চাইছে না মোদি সরকার। কেননা এতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে দীর্ঘদিনের বন্ধু হাসিনাকে ছেড়েও দিতে পারছে না দিল্লি।

ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্কের বহু পুরোনো। দেশটির যেকোনো সরকারের সঙ্গে হাসিনা ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইন্দিরা গান্ধী সরকার থেকে শুরু করে মোদি সরকার সবাই তাকে মিত্র হিসেবেই দেখে আসছে। তাই এই মুহূর্তে তাকে ফেলে দেয়া ভারতের পক্ষে খুব সহজ হবে না।

অন্য কোনো বিকল্প আছে কি?

শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বসবাস করেন। রাদওয়ানের স্ত্রী ফিনল্যান্ডের নাগরিক। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য ফিনল্যান্ড হতে পারে কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এদিকে বুধবার (৭ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড ও ভারতে বসবাস করেন। এসব দেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে আশ্রয় নেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করে দেখছেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় কী বলছেন

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন এমন খবরগুলো ভুয়া। তিনি কোথাও আশ্রয়ের আবেদন করেননি।

বুধবার (৭ আগস্ট) জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও একই কথা বলেছেন জয়। তিনি বলেন, এগুলো সব গুজব। তিনি এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি আরও কিছুটা সময় দিল্লিতে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *