যেসব সুবিধা পাবেন প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা!

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে সরকারের দফতরও বণ্টন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী এই সরকারের প্রধানসহ বাকি উপদেষ্টারা কে কি সুবিধা পাবেন তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। তবে প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর সমান পদমর্যাদায় দায়িত্বপালন করবেন। একইভাবে মন্ত্রীর সমান মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করবেন উপদেষ্টারা। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদার সুযোগ সুবিধা পাবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীদের মতো সুবিধা পাবেন উপদেষ্টারা।

সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিরা গাড়ি, বাড়ি, চিকিৎসা খরচসহ অন্তত ১৩ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। জেনে নেয়া যাক সেসব সুবিধার বিস্তারিত।

প্রধান উপদেষ্টার বেতন ও সুযোগ সুবিধা

দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি মাসিক বাড়ি ভাড়া পান ১ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা পান ৩ হাজার টাকা। যাতায়াত খরচ, বাড়ির ভাড়া, ডেইলি অ্যালাউন্স, ইনস্যুরেন্স সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, নিজের দফতরের এবং অন্য টেলিফোন ব্যয়, চিকিৎসা সেবাসহ আরও অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পাবেন এবং এসব খরচ পুরোটাই দেবে রাষ্ট্র।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি সরকারি বাসভবন পান। তবে কেউ চাইলে নিজের বাড়িতে অথবা অন্য কোথাও বাড়িভাড়া নিয়েও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সেই বাড়িও সরকারি টাকায় অত্যাধুনিক বিলাসবহুল করে সাজিয়ে দেয়া হবে। তার বাড়ির নিরাপত্তায় থাকেন স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পাবেন।

উপদেষ্টাদের বেতন

একজন পূর্ণ মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে উপদেষ্টারাও একই বেতন পাবেন।

বাড়িভাড়া

দায়িত্বে আসার পর সব মন্ত্রীরাই সরকারি ব্যয়ে একটি সুসজ্জিত বাসভবন পান বিনা ভাড়ায়। তবে মন্ত্রী সরকারি বাড়িতে না থেকে যদি নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আলাদা বাসা ভাড়া দেয়া হয়। সরকার থেকে পূর্ণ মন্ত্রীদের বাসা ভাড়া হিসেবে দেয়া হয় ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকলে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার সমান টাকা পাবেন। সরকারি বাড়ি সাজসজ্জার জন্য প্রতিবছর পাঁচ লাখ টাকা পান একজন মন্ত্রী। সে হিসেবে উপদেষ্টারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

আপ্যায়ন ভাতা

মন্ত্রীদের দফতরে দেশি-বিদেশি অনেকেই আসেন সাক্ষাৎ করতে। তাদের আপ্যায়নের জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা করে পান মন্ত্রী। এখন উপদেষ্টারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

চিকিৎসা খরচ

মন্ত্রীত্ব থাকাবস্থায় মন্ত্রিসভার সদস্যরা অসুস্থ হলে তার পুরো ব্যয়ভার সরকার বহন করে। এ ক্ষেত্রে বলা আছে, চিকিৎসা খরচ সীমাহীন। তবে খরচের ভাউচার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হবে। এখন উপদেষ্টারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

সরকারি গাড়ি

মন্ত্রী সরকারি খরচে একটি গাড়ি পেয়ে থাকেন। গাড়িটি পরিবহন পুল সরবরাহ করে। জ্বালানি বাবদ দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হয়। মন্ত্রী দেশের ভেতরে কোথাও ভ্রমণে গেলে দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার করে। এখন উপদেষ্টারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

১০ সহায়ক

নিজের পছন্দ অনুযায়ী উপসচিব পদমর্যাদার একজনকে একান্ত সচিব হিসেবে পান মন্ত্রী। পূর্ণ মন্ত্রী একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং সরকারি কর্মকর্তার বাইরে নিজের পছন্দের একজন সহকারী একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। এছাড়া দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন জমাদার, একজন আরদালি, দুজন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পেয়ে থাকেন। এছাড়া মন্ত্রী একটি করে মুঠোফোন পাবেন। এখন উপদেষ্টারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা দাবির মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেদিন দুপুরেই ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের সি১৩০ উড়োজাহাজ শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির বাইরে হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে। তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আরও ১৩ উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। এর একদিন পর শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ড. ইউনূসের হাতে থাকছে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব:

১. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
২. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
৩. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ
৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়
৫. সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়
৬. খাদ্য মন্ত্রণালয়
৭. গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
৮. ভূমি মন্ত্রণালয়
৯. বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়
১০. কৃষি মন্ত্রণালয়
১১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
১২. রেলপথ মন্ত্রণালয়
১৩. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
১৪. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
১৫. নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়
১৬. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়
১৭. মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
১৮. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
১৯. তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
২০. প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
২১. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
২২. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
২৩. সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
২৪. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
২৫. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
২৬. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
২৭. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

এছাড়া সালেহ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখাওয়াত হোসেন; ড. আসিফ নজরুল পেয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; আদিলুর রহমান খান পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়; হাসান আরিফ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; তৌহিদ হোসেন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; মিজু শারমীন এস মুরশিদ পেয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন পেয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; ফরিদা আখতার পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; নুরজাহান বেগম পেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; নাহিদ ইসলাম পেয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *