ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালাতে বাধ্য হয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ জয় সবশেষ শনিবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন সংস্কার চলছে না, বরং গণ-অরাজকতা চলছে।
জ (শনিবার) প্রতিবাদকারীরা সুপ্রিম কোর্টে আক্রমণের হুমকি দিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা আদালতের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগের একটি তালিকা সরবরাহ করেছে।”
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জয়। ‘অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনকারীদের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে’ দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিবাদকারীদের মনোনীত বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটি দেশের সুপ্রিম কোর্টকে কোন প্রক্রিয়া ছাড়াই, নির্বাচিত সংসদ ছাড়াই কীভাবে পরিবর্তন করা যায়?’
জয় আরও লেখেন, ‘এটি সংস্কার নয়, এটি গণঅরাজকতা। বাংলাদেশে কোন আইনশৃঙ্খলা নেই যখন এমনকি সুপ্রিম কোর্টও নিরাপদ নয়।’
এছাড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের যে তালিকা তৈরি করে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন – তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন জয়।
তিনি ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমার মায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ আনার পর, এটি কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরও গুরুতর আক্রমণ নয়? তাহলে কি এখন জনতা সাংবাদিকদের বহিষ্কার করার জন্য তালিকা দেবে?”
এর আগে, শনিবার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। রোববার শপথ নিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে সাংবাদিকদেরকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে, সে ঘটনারও প্রতিবাদ জানান জয়।
এর আগে, ৯ আগস্ট সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জয় জানিয়েছেন, তার মা শেখ হাসিনা আর দেশে ফিরবে না এবং রাজনীতি করবেন না।
এর মাত্র এক দিন আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। সাক্ষাৎকারে জয় আরও বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে শপথ নিলেও রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টাসহ নতুন সরকারের ১৪ জন উপদেষ্টা দায়িত্ব নিলেও বাকি ছিলেন তিন জন। তাদের মধ্যে থেকে সুপ্রদীপ চাকমা এবং ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শপথ নিয়েছেন রোববার। তাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে সেনা টহল দলের উপর বিক্ষোভকারীদের হামলার পর সেখানে বাড়িত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী গণসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর। গত কয়েকদিন যাবত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে শনিবার সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর বিক্ষোভকারীরা হামলা চালালে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
Leave a Reply