রিমান্ডে থাকা সদ্য বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের যে গাইডলাইন দিতেন আমি সেই গাইডলাইন ফলো করেছি মাত্র। হত্যা মামলায় কেন আমাকে রিমান্ডে এনেছেন? যারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল তাদের ধরেন।’
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ছাড়া দায় স্বীকার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান। তারা তিনজনই এখন নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে আছেন।
এ বিষয়ে যুগান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকার পাপশ বিক্রেতা শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় এই তিন আসামি রিমান্ডে থাকলেও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিসংতা সৃষ্টির নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুরুতে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর ওপর দায় চাপালেও এখন দায় চাপাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
তারা বলছেন, ‘আমরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তারা যেসব পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের দায় স্বীকার করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে দুটি টিমের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি টিমে আছেন নিউমার্কেট থানার ওসির নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। তারা মূলত থানা পুলিশের সদস্য। অপর একটি টিমে আছেন ডিএমপি সদর দপ্তর এবং ডিবির কর্মকর্তারা। এই টিমটি করা হয়েছে মূলত উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। জুনিয়র টিম কেবল মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তারা মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগের বাইরে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন না। আর সিনিয়র টিমটি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কেবল মামলার বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে ডিবির বেশির ভাগ পদস্থ কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হওয়া এবং নতুন আদেশপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা এখনো যোগদান না করায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী আসামি হওয়ায় কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছেন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আনিসুল হক বেশির ভাগ সময় হাসছেন। বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের যে গাইডলাইন দিতেন আমি সেই গাইডলাইন ফলো করেছি মাত্র। হত্যা মামলায় কেন আমাকে রিমান্ডে এনেছেন? যারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল তাদের ধরেন।’
ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপোশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) গ্রেপ্তার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। বুধবার (১৪ আগস্ট) তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে সরাসরি তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জিয়াউল আহসানকে একই মামলায় আদালতে হাজির করে তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনজনই এখন ডিবি হেফাজতে পুলিশের রিমান্ডে আছেন।
এ দিকে যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সেই মামলার এজাহার সংশোধন করা হচ্ছে। মামলার বাদী শনিবার (১৭ আগস্ট) সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন। পরে সেটি আদালতে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো, বিশেষ উদ্দেশ্যে আড়িপাতার যন্ত্র ক্রয়, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর কনসেপ্ট তৈরি এবং বহু মানুষকে গুম-খুন করার বিষয়ে তাদের হাত রয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
যেসব ঘটনায় মামলা হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-শেয়ার কেলেঙ্কারি, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ-নিধন, আড়িপাতার যন্ত্র পেপাসাস সফটওয়্যার ক্রয়, আয়নাঘর কনসেপ্ট এবং অসংখ্য গুম-খুনসহ নানা আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।
Leave a Reply