বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদের অজানা যত কথা!

দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদে ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিসিবির জরুরি সভায় পদত্যাগ করেন তিনি। তার জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ফারুক আহমেদ। যিনি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার। একসময় দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাচক হিসেবেও।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। পরে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি। এ অবস্থায় বোর্ডের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের স্বার্থে জরুরি মিটিং ডাকা হয়। ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দিয়ে পদত্যাগ করেন পাপন।

এরপরই জানানো হয় বিসিবির নতুন সভাপতি হবেন ফারুক আহমেদ। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৪ জুলাই, ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেছেন সাবেক এ ক্রিকেটার।

১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফারুকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। একই দিন অভিষেক হয় ওয়াহিদুল গণি ও আকরাম খানেরও। মিডল অর্ডারে বেশিরভাগ সময় খেললেও অনেকবার ইনিংস উদ্বোধন করতে দেখা গেছে তাকে।

ফারুক তার ক্যারিয়ারের সেরা ৫৭ রানের ইনিংস খেলেছেন ভারতের বিপক্ষে। ১৯৯০ সালে চন্ডিগড়ে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে তৃতীয় উইকেট জুটিতে আতহার আলী খানের সঙ্গে ১০৮ রান যোগ করেন এ ব্যাটার। ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্যও ছিলেন তিনি।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন ফারুক। তার অধিনায়কত্বে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সে সময় শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়েই টুর্নামেন্টটিতে খেলতে গিয়েছিল টাইগাররা। তাই আশানুরূপ ফল না আসায় টুর্নামেন্ট শেষে অধিনায়কত্ব হারানোর পাশাপাশি দল থেকেও বাদ পড়েন।

ফারুক আহমেদ জাতীয় দলে বেশ অনিয়মিত ছিলেন। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১০৫ রান করেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে তিনি ২১ ম্যাচ থেকে সংগ্রহ করেছেন ৪৩৭ রান। জাতীয় দলে ফারুল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেন ১৯৯৯ সালের ২৭ মে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন ফারুক আহমেদ। এই সময়ে তিনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবালদের মতো তরুণদের সুযোগ দেন। যারা পরবর্তীতে দেশের ক্রিকেট নিয়ে গেছেন বহুদূর।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৩ সালে ফের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান ফারুক আহমেদ। নবনির্বাচিত বিসিবি সভাপতির অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপে সাফল্যের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ করেই বোর্ডে দেখা যায় বিশৃঙ্খলা। কাজের মধ্যে শুরু হয় হস্তক্ষেপ।

বিসিবির এমন দ্বি-স্তরের নির্বাচক কমিটি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন ফারুক আহমেদ। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ঘটনা। স্পষ্টভাষী ফারুক আহমেদ এবার বিসিবির সভাপতি হওয়ায় অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন নতুনভাবে এগোবে দেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *