বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত।
জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কামালপুর ইউনিয়নের বুরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাদিয়া সুলতানা প্রথম ক্লাসে পাঠদানের সময় তারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী, পড়া না হওয়ার কারণে শিক্ষক নাদিয়া সুলতানা শিক্ষার্থীদের বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ রেখেছিলেন, আর তাতেই ক্লাসের ওই ১৫জন অজ্ঞান হয়ে যায়। তবে স্কুলের শিক্ষক এবং উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এব্যাপারে জানান, ক্লাস চলাকালীন একজন শিক্ষার্থী ক্লাসে বমি করে। তার বমি করা দেখে আরও কয়েকজন বমি করে। এরপর ক্লাসের সবাই অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে অভিভাবক এবং স্কুলের শিক্ষকরা সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীরা হলো একই প্রতিষ্ঠানের বুরোইল এবং পাইকরতলী গ্রামের হোসেন মিয়ার মেয়ে রিয়া মনি (১২), আমিনুর ইসলামের মেয়ে আরিফা খাতুন (১৩), অবিরাম হাওলাদারের মেয়ে বন্যা খাতুন (১৪), তোরাপ মিয়ার ছেলে ইয়ামিন হাসান (১৩), আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহান মিয়া (১৪), হাসেন আলীর ছেলে হুমায়ূন কবির (১৩), মাছুদ মিয়ার ছেলে রাব্বি হাসান (১৪), মোস্তার ছেলে সীমান্ত মিয়া (১৩), ওসমান গনির মেয়ে আশা মনি (১২), শহিদুল ইসলামের ছেলে এনামুল হক (১৩), জহুরুল ইসলামের মেয়ে রোকেয়া খাতুন (১৪), তাজেব্বর সরকারের ছেলে আবু মুসা (১৩), মিজানুর রহমানের মেয়ে সাবিনা খাতুন (১৩), মকবুল হোসেনের মেয়ে মাইশা আক্তার (১০), মুন্নাত সরকারের মেয়ে মোহনা খাতুন (১২), ইউসুফ মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (১০), নূরুল হকের মেয়ে শিখা আক্তার (১০) এবং আশরাফ আলীর মেয়ে মরিয়ম খাতুন (১১)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের নিলডাউন করে রেখেছিলেন’। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমরা স্কুলে গিয়ে দেখি সব ছাত্র-ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। পরে তাদের কয়েকজন মিলে ঘাড়ে করে তাদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ক্লাসে ম্যাডাম তাদের নিল ডাউন করে বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে অফিসে গিয়েছিলেন। অনেকক্ষণ পর তিনি ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে ওই শিক্ষার্থীরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রভাত চন্দ্র সরকার বলেন, ঘটনার সময় ক্লাস টিচার ছিলেন নাদিয়া জাহান। প্রথম ক্লাস চলাকালীন রাব্বি নামের এক শিক্ষার্থী বমি করে। তার বমি করা দেখে মুসা নামের আর এক শিক্ষার্থীও বমি করে এবং মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরবর্তীতে ক্লাসের সকল শিক্ষার্থী বমি করতে থাকে এবং অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকে। পরে স্কুলের শিক্ষকরা তাদের হাতে পায়ে তেল মালিশ করে এবং মাথায় পানি দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সারিয়াকান্দি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হাসান বলেন, আমরা ধারণা করছি, এটা একধরনের মাস্ক প্যানিক এটাক। এ ধরনের ঘটনা এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সব শিক্ষার্থী শঙ্কামুক্ত রয়েছে এবং তাদের সবারই জ্ঞান ফিরে এসেছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাদের ছুটি দেয়া হবে।
Leave a Reply