“দেখি কার সাথে নিয়ে বসায়, আমাদের দাবি পূরণ না হলে কোনো আশ্বাসে তো আমরা আন্দোলন ছাড়ব না। জাতীয়করণ করতে হবে।”
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার আনসার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয় ঘেরাও করে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে।
আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান বলেন, “আনসার সদস্যদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ে এসেছে।
বিভিন্ন সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, দৈনিক ৫৪০ টাকা চুক্তিতে কর্মরত আনসার সদস্যরা তাদের চাকরি স্থায়ী করতে চান। এ দাবিতে তারা গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন।
এরপর রোববার সকাল ৮টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে হাজার হাজার আনসার সদস্য বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। তার সমাবেশকে কেন্দ্র করে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা জানান, এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা ঢাকায় এসেছেন এবং অনেক মানুষ আসছেন। এক সময় তারা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা বিদ্যুৎ ভবন সংলগ্ন গেট থেকে সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাদের কর্ডন থাকায় কেউ সচিবালয় থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে পারেনি।
পরে বেলা ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান।
এ সময় প্রতিনিধি দলের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ভেতরে আসতে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। দেখা যাক তারা কার সঙ্গে বসেন। আমাদের দাবি না মানলে আমরা ছাড়ব না।” ” কোনো আশ্বাস ছাড়াই আমাদের আন্দোলন জাতীয়করণ করতে হবে।”
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই সদস্যরা বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৫৪০ টাকায় চুক্তিতে কাজ করে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে রেশন সুবিধা বরাদ্দ করা হয়। তারা এখন স্থায়ী নিয়োগ চায়।
যদি কোন সংস্থা মনে করে যে তাদের তাত্ক্ষণিক নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়ার জন্য জনবল প্রয়োজন, তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবলের জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরে আবেদন করে।
পরবর্তীতে, সদস্যদের আবাসন ও অস্ত্র এবং দুই মাসের অগ্রিম বেতন প্রদানের শর্তে তিন বছরের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়োগ করা হয়।
সারা দেশে এ ধরনের আনসার সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, যাদের প্রতিদিন ৫৪০ টাকা করে বেতন দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে।
বাকি 15,000 সদস্য ‘বিশ্রামের সময়’ আছে। যখন একটি সংস্থা নতুন চাহিদা পায় বা পূর্বের সংস্থার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন ‘বিশ্রামে’ থাকা সদস্যদের বিদায় করা হয়। এছাড়াও, ‘বিশ্রামে’ সদস্যদেরও জরুরি পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বের জন্য পাঠানো হয়।
৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আনসার সদস্যদের পুলিশবিহীন সড়ক ও থানা নিরাপত্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পাঠানো হয়।
আনসার সদস্যদের ‘স্বেচ্ছাসেবক’ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ কোন কাজ নয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাহিনী কর্তৃক স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার উপর নির্ভর করে, তাদের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ করা হয়।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাকরি জাতীয়করণের জন্য আন্দোলন শুরু করা আনসারদের তাদের কিছু “যৌক্তিক” দাবি মেনে নিয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দাবির ‘উপযুক্ত সমাধান’ করা হবে।
এই কমিটি দাবিগুলো পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সুপারিশ করবে এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আনসারদের দাবি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে, “সরকার জেনারেল আনসারের উত্থাপিত দাবিগুলি গভীর মনোযোগ ও সহানুভূতির সাথে পর্যালোচনা করেছে। প্রাথমিকভাবে কিছু দাবি ন্যায্য বলে মনে হচ্ছে।”
জেনারেল আনসার পদে নতুন কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তিন বছর চাকরির পর বিশ্রাম ছাড়া সাধারণ আনসারদের চাকরি অব্যাহত রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আশ্বাসের পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে। ‘মুষ্টিমেয় কয়েজন উসকানিদাতা’ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে মন্তব্য করে মন্ত্রণালয় বলেছে, “সরকার প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।”
Leave a Reply