ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন কালীগঞ্জসহ ঝিনাইদহের হাজার হাজার মানুষ। তার লাশের সন্ধান না পাওয়ায় হতাশা বাড়ছে স্বজনদের মধ্যে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ঘাতক সিয়াম নেপালে এবং মূল মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল, সিলিস্তা রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল অনেক তথ্য দিয়েছে। এখন রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত পলাতক খুনিদের গ্রেফতারেও অভিযান চালানো হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আসামিদের আট দিনের রিমান্ড হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা যেসব তথ্য দিচ্ছে, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। হত্যাকাণ্ডের কারণ ও অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, এমপি আজিমকে তারা খুনের পরিকল্পনা নিয়েই কলকাতায় গিয়েছিল। কিন্তু খুনের আগে তার কাছ থেকে কিছু অর্থ আদায় করা যায় কিনা, এ জন্য ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টাও করেছেন। এ জন্য সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে নেওয়ার পর ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর সিলিস্তার সঙ্গে এমপির আপিত্তকর ছবি তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকমাত্রায় ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করায় গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েন এমপি আজিম। পরে ব্ল্যাক মেইলের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে বালিশচাপা দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
আমান ওরফে শিমুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এমপি আজিমকে হত্যার সময় ওই কক্ষে তার সঙ্গে ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম এবং জুবেইর ওরফে জিহাদ হাওলাদারও উপস্থিত ছিলেন। তারা এমপির লাশের পাশে বসেই মদ ও হেরোইন সেবনের আসর বসান। মদ ও হেরোইন সেবন করে লাশ টুকরো টুকরো করেন। মরদেহের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে জিহাদ ও সিয়াম। এই জিহাদ ও সিয়াম আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা আগে থেকেই কলকাতায় অবস্থান করছিলেন।
আমান ওরফে শিমুলের ভাষ্য, তারা প্রথমে এমপি আজিমের লাশ গুমের জন্য হাড়-মাংস আলাদা করেন। হাড়-মাংস ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে বাইরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মাংসগুলো কিমার মতো বানিয়ে বাথরুমের কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়। পড়ে হাড় ও মাথার খুলির একটি ব্যাগ নিয়ে সে একটি শপিংমলের সামনে সিয়ামের কাছে দেয়। সিয়াম ও জিহাদ মিলে সেগুলো ফেলে দেয়।
ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিহাদ জানিয়েছেন, সিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে তারা এমপি আনারের হাড় ও খুলি নিয়ে ভাঙর এলাকায় জিরেনগাছা ও কৃষ্ণমাটি ব্রিজের কাছে বাগজোলা খালপাড়ের নির্জন জায়গায় ছুড়ে ফেলেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, ভারতীয় পুলিশ দুদিন ধরে সেই খালে তল্লাশি চালিয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় পুলিশ ওই খাল থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করেছে, কিন্তু সেগুলো এমপি আজিমের কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ জন্য সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তারা মাথার খুলি উদ্ধারের জন্য জোরদার অভিযান চালাচ্ছেন।
Leave a Reply