আব্দুল জব্বার। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অপর পরিচয় তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে- দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন তুলছেন আব্দুল জব্বার।
অপরদিকে, স্ত্রী জেসমিন আক্তার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আওয়ামী লীগের পদে থাকায় আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননি কেউ।
আব্দুল জব্বারের বাড়ি একই উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নে। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন আবদুল জব্বার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদিনও কর্মচারী হিসেবে বিদ্যালয়ে যাননি তিনি। শুধু মাস শেষে গিয়ে পুরো মাসের স্বাক্ষর করে তুলেছেন স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন এবং ব্যাংক থেকে তুলেছেন বেতনের সরকারি অংশ।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, আব্দুল জব্বার হাজির না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে অতিরিক্ত কর্মচারী রাখতে হয়েছে বিদ্যালয়ে। সেই বেতনও গুনতে হয় বিদ্যালয়কেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দলীয় লোকজন দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে সবসময় দৌড়ের ওপর রাখতেন তারা। এমনকি কর্মচারী আব্দুল জব্বারকেও স্যার বলে ডাকতে হতো শিক্ষকদের।
শিক্ষকরা আরো জানান, শিক্ষক ও কর্মচারীর ঘাটতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে কয়েকজন স্টাফ নিয়োগ দেয় বিদ্যালয় কমিটি। স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সেসব খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বেতন বৃদ্ধির দাবি জানালেই চাকরি ছাড়তে বলা হয় তাদের। অথচ কোনো কাজ না করেই ১৬ বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি সমুদয় বেতনের টাকা নিচ্ছেন আব্দুল জব্বার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আব্দুল জব্বার ছুটিতে রয়েছেন। আব্দুল জব্বারের অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ করিম বলেন, উপস্থিতি দেখা আমার বিষয় না। সেটি প্রধান শিক্ষক দেখেন। এটি কীভাবে হয়েছে সেটি আমরা পরে দেখব।
এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ- মাত্র কয়েক বছরে কোটি টাকা খরচ করে বিশাল বাড়ি করেছেন আব্দুল জব্বার। সরকারি টাকায় দিয়েছেন নিজ বাড়ির পুকুরঘাট। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা, এমনকি মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে আব্দুল জব্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আব্দুল জব্বার। চাকরি বাঁচাতে পাঠিয়েছেন ছুটির দরখাস্তও।
Leave a Reply