‘এর আগে আপনি পায়রা সেতুর টোল প্লাজা নিয়ে প্রতিবেদন করছেন, ভাবছিলেন যে আমাদের অনেক কিছু করে ফেলতে পারবেন। এখন আবার তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছেন, বিষয়টা কি? গর্ভমেন্ট কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে আমাকে মামলা করার রাইট দিছে। আপনাকে জেল খাটানোর রাইট দিছে। আপনার পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার কোন তথ্য থাকে, গভর্মেন্ট অফিসার হিসাবে আমাকে রাইট দিছে। আপনার সর্ম্পকে আমি সব ধরনের খোঁজ-খবর নিছি। আপনি সাংবাদিক হয়ে কি সবার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে পারেন?’
দৈনিক যুগান্তর পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি (উপকূল) বিলাস দাসকে এমন হুমকি দিয়ে এসব কথা বলেন পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের সদ্য বদলি হওয়া র্নিবাহী প্রকৌশলী এএম আতিক উল্লাহ।
এ ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে ৩০ আগস্ট পটুয়াখালী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বিলাস দাস। জিডি নং-১১৫২/২৪।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সওজের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার বলেন, ব্যস্ততার কারণে আবেদনটি আমার নজরে আসেনি। তিনি দীর্ঘদিন এখানে থাকায় কেউ হয়তো আবেদনের কপি তাকে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সদর থানার ওসি মো. জসীম বলেন, লিখিত অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘১৫শ কোটি টাকার পায়রা সেতুতে লুটপাটের মহোৎসব। দু-তৃতীয়াংশ টোলের অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটে। মুখ খুলছে না সওজ, দুর্নীতি ঢাকতে তদন্ত-অডিট।’ এমন শিরোনামে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এর আগে ‘পায়রা সেতু ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি, সাধারণ পদ্ধতিতে পার হচ্ছে ভারী যানবাহন’ শিরোনামে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএম আতিক উল্লাহসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে টেন্ডার দুর্নীতি, অর্থের বিনিময় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং ভুয়া বিল-ভাউচারে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সওজ প্রধান প্রকৌশলীর কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো তদন্ত অথবা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে মাঠে কাজ শুরু করে যুগান্তর। অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে সওজের কাছে তথ্য চাওয়া হলে তারা তথ্য দেওয়ার নামে টালবাহানা শুরু করে। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে প্রভাবশালী মহলকে দিয়ে প্রভাবিত করা হয় এই প্রতিনিধিকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট তথ্য অধিকার আইনে পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হয়। এর সূত্র ধরে ২৮ আগস্ট বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী এএম আতিক উল্লাহ প্রতিনিধির ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তথ্য চাওয়ার কৈফিয়ত জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন- ‘আমি এএম আতিক উল্লাহ, একজন সরকারি কর্মকর্তা। এএম আতিক উল্লাহ সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে যদি কোনো ভুল করে, তার জন্য আইন আছে, আদালত আছে, দুদক আছে: আপনি সাংবাদিক হয়ে কি সবার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারেন?’ এ সময় তিনি তার আমলের বিষয়বস্তু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে প্রতিনিধির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এর আগের আতিক উল্লাহর অশালীন আচরণের ঘটনায় সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করে পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
Leave a Reply