কথায় বলে, দিনের শুরুটাই নাকি বাকি অংশের গতি বলে দেয়। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন অবশ্য এমন কথার বিরোধিতাই করবে। মাত্র ২৬ রানে ছয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ যেভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে, সেটাকে রূপকথা বললেও অত্যুক্তি হবে কি?
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে অল আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬২ রান। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করা পাকিস্তান তৃতীয় দিন শেষে যোগ করেছে আরো ৯ রান। তবে এর মাঝে হারিয়েছে দুই উইকেট। স্বাগতিকদের লিড ২১ রান।
বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ সকালের প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ১৬ রান যোগ করতেই হারায় ছয় উইকেট। এ অবস্থায় নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অল আউট হওয়ার আগের রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন চোখ রাঙাচ্ছিল টাইগারদের।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুটা ধরে খেললেও খারাপ বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করেননি তারা। দুজনের শক্ত জুটি শতক পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ফলো অন এড়ায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে স্বস্তি নামে টাইগার শিবিরে।
ফলো অন এড়ানোর পরপরই ফিফটির দেখা পান লিটন। অর্ধশতকের দেখা পান মিরাজও। দুজনের ব্যাটে একসময় লিডের স্বপ্নও দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চা বিরতির একটু আগে ঘটে ছন্দপতন। যেখানে জোড়া আঘাত হানেন খুররাম শাহজাদ।
প্রথমে ৭৮ রান করা মিরাজকে সাজঘরে ফেরান খুররাম। এর মাধ্যমে ভাঙে লিটন-মিরাজের ১৬৫ রানের জুটি। টেস্ট ক্রিকেটে সপ্তম উইকেটে এটাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক রানের জুটি। চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে সপ্তম উইকেটে রেকর্ড ১৯৬ রানের জুটি গড়েছেন মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ।
এর কিছু পরই তাসকিন আহমেদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন খুররাম। তার বিদায়ের পরই চা বিরতির ঘোষণা দেন আম্পায়াররা। বিরতির পর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন লিটন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন হাসান মাহমুদ। আবরার আহমেদের বলে চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন।
১৭১ বলে এ মাইলফলকে পৌঁছান লিটন। তার অবিশ্বাস্য ইনিংস থামে ১৩৮ রানে। এর আগে নবম উইকেটে হাসান মাহমুদের সঙ্গে ৬৯ রানের দারুণ আরেকটি জুটি গড়েন তিনি। লিটন ফেরার পর রান যোগ করার আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১২ রানের লিড পায় পাকিস্তান। দলটির হয়ে খুররাম ৬টি এবং মির হামজা ও সালমান আঘা দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
ব্যাট করতে নেমে ৩.৪ ওভার খেলতে পারে পাকিস্তান। এর মাঝেই জোড়া আঘাত হানেন হাসান মাহমুদ। প্রথমে আবদুল্লাহ শফিককে ৩ রানে লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা খুররামকে খাতা খোলার আগেই বোল্ড করেন এ পেসার। তাতে কিছুটা চাপে থেকেই চতুর্থ দিন খেলতে নামবে পাকিস্তান।
সকালের দুঃস্বপ্নের শুরুর পর এমন স্বস্তিতে দিনের সমাপ্তি, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মন খুশি থাকাই স্বাভাবিক!
Leave a Reply