ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন। হাসিনার ভারতে অবস্থানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।
বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ড. ই্উনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের চাপে হাসিনাকে ভারত ফেরত দেবে? দুদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনার দেড় দশকের এই শাসনামলকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচনি কারচুপি এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিচারের মুখোমুখি করার জন্য হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবি করছে দেশের জনগণ।
ভারতীয় সংবাদসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’
ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে কথা বলছেন। এটা সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম। মানুষও এটা ভুলে যেত, যদি তিনি নিজের জগতেই থাকতেন। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউই এটা পছন্দ করছে না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিবৃতিটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরই আলোকপাত করছে। কিন্তু তার দাবিতে রাজি হয়ে হাসিনাকে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে এমন সম্ভাবনা কম।
হরিয়ানার জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। যা হয়েছে তা হলো– এখন বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডার শেখ হাসিনা-বিরোধী এবং ভারত-বিরোধী অবস্থান নিতে চায়।’
অবশ্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হলে তেমন ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা সম্পর্কে গত শুক্রবার দিল্লিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সেসময় বলেন, হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি এখনও ‘অনুমান-নির্ভর প্রশ্ন’।
লন্ডন-ভিত্তিক লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ভারত।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য এর আগেও ভারতে থেকেছেন। ভারতীয় আমলাতন্ত্র স্বল্প এবং মাঝারি মেয়াদে হাসিনার প্রতি তাদের এই আতিথেয়তার বিপরীত কিছু করবে, তেমন সম্ভাবনা খুব কম।’
শ্রীরাধা দত্তের দাবি, ভারতে হাসিনার উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতারা ভারতের সঙ্গে সম্ভবত দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ উভয় দেশই অন্যথায় তাদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলতে পারে।
তিনি আরও দাবি করেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে, (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) সম্পর্ক ছিল এবং আমরা যুক্ত থাকতে চাই কারণ এটি উভয় দেশের জন্য সুবিধাজনক।’
Leave a Reply