রশিদের স্ত্রী বলেন, “এখানে কোনো লেখাপড়াও হয়নি এবং টাকার কথা বলাও হয়নি। তারা নিজ ইচ্ছায় আমাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে।”
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ ‘চিকিৎসার টাকার জন্য নবজাতককে বিক্রি’ করেছেন সংবাদমাধ্যমের এমন প্রতিবেদন এসেছে। তবে রশিদ বলেছেন, ‘বিক্রি নয়, স্বেচ্ছায়’ তিনি সন্তানকে স্বজনের কাছে দিয়েছেন।
মেয়েশিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তায় ও ভালো থাকার জন্যই নিঃসন্তান আত্মীয়ের কাছে নবজাতককে দেওয়ার পরিবারিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই দিনমজুর।
দিনাজপুর সদরের রাজবাড়ি কাটাপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী মোছা. রত্নার দাবি, এখানে টাকা চাওয়া-পাওয়ার কোনো বিষয়ই ছিল না। তবে সন্তান গ্রহিতারা পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে আরও দিতে চেয়েছেন।
ট্রাক্টর শ্রমিক হিসেবে কাজ করা আব্দুর রশিদ ৪ অগাস্ট সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হাসপাতালের ভেতরে সংঘর্ষ হলে জরুরি বিভাগের বারান্দায় থাকা আব্দুর রশিদ গুলিবিদ্ধ হন।
ওই হাসপাতালেই চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ অগাস্ট সেখানে তার অপারেশন হয়।
এদিকে দুই দিন পর তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এই দম্পতির দুই বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে।
পরে আব্দুর রশিদ চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকায় নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন এমন একটি খবর নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
টাকার বিনিময়ে নবজাতক বিক্রির বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে আহত আব্দুর রশিদ বলেন, “আমার অপারেশনের পর আমার স্ত্রীও সন্তান জন্মদানের পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে স্ত্রী ছাড়া আমাকে দেখভাল করার আর কেউ নেই।
“নিজের এবং অসুস্থ স্ত্রী এবং দুই বছরের প্রথম শিশু কন্যার কথা ভেবেই পরিবারের সিদ্ধান্তে নবজাতক কন্যাকে স্বেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছি।”
তার স্ত্রী মোছা. রত্না বলেন, “এখানে কোনো লেখাপড়াও হয়নি এবং টাকার কথা বলাও হয়নি। তারা নিজ ইচ্ছায় আমাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে।”
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসাবে দিনাজপুরে যারা কাজ করছেন তারাও আব্দুর রশিদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং সার্বিক সহযোগিতা করছেন। তার চিকিৎসায় ওষুধের টাকাও তারা পরিশোধ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি একরামুল হক আবির জানান, তারাও ‘চিকিৎসার জন্য নবজাতক বিক্রি’র এমন খবরে বিস্মিত হয়ে রশিদের বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
একরামুল হক বলেন, “আমরা দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তার সন্তানকে ফেরত আনতে চাইলেও আব্দুর রশিদ আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি আমাদের জানান, তারা স্বেচ্ছায় সন্তানকে দিয়েছেন ভালো থাকার জন্য।”
Leave a Reply