খালিদ মাহমুদ আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই- কেমন লাগছে! আজ বিসিবি থেকে পদত্যাগের খবর শোনার পর এটাই সবার প্রথম অনুভূতি হওয়া উচিত। প্রায় ১২ বছর বোর্ডের পরিচালক থাকা ছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক ক্ষেত্রেই জড়িত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। সেই মাহমুদ আর বিসিবির পরিচালক নেই!
আরেক সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমানের মতো মাহমুদও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিসিবি পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে কী কারণে তিনি ফারুক আহমেদের বোর্ডে থাকতে চান না তা ‘ওপেন সিক্রেট’। সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেও একসময় নাজমুল হাসানের বিশ্বস্ত পরিচালকদের একজন ছিলেন মেহমুদ।
বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদের সংস্কারমুখী চিন্তায় তার মতো পরিচালক থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। মাহমুদ, যিনি ২০১৩ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে বিসিবি পরিচালক ছিলেন, মৌলিকভাবে সেই বার্তাটি বুঝতে পেরেছিলেন।
নাজমুল হাসানের পর, আগের যুগে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসনে খালিদ মাহমুদ ছিলেন দ্বিতীয় আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্ব। উচ্চ স্তরে তার অতীত খেলার কেরিয়ার ছিল, এবং বোর্ড পরিচালক হওয়ার আগে পেশা হিসাবে কোচিং গ্রহণ করেছিলেন, তাই মাঠে তার ভাল এক্সপোজার ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাহমুদের যাত্রা ঘরোয়া ক্রিকেট মাঠ থেকে জাতীয় দল, বিসিবি বোর্ড রুম এবং প্রেসিডেন্ট বক্স পর্যন্ত। তাদের ইচ্ছা প্রায়শই নীতিতে রূপান্তরিত হয়।
নাজমুল হাসানের বোর্ডে ‘স্বার্থের সংঘাত’ শব্দটি মেহমুদকে কেন্দ্র করে। তিনি বোর্ড ডিরেক্টর হিসেবে ক্লাবের কোচিং করেছেন এমনকি একই মৌসুমে একাধিক লিগে একাধিক ক্লাবকে কোচিং করেছেন। বিপিএল ও প্রাইভেট একাডেমিতে কোচিং করেছেন।
একটি প্রভাবশালী দলের কোচ হিসেবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিকে প্রভাবিত করার জন্য বহুবার অভিযুক্ত হয়েছেন। নামমাত্র তৃতীয় বিভাগ নির্বাচনের ক্রিকেটের পেছনেও তার ভূমিকার কথা শোনা যায়। এর কিছুই অজানা ছিল না তৎকালীন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের। এসব খবর গণমাধ্যমে এসেছে বহুবার।
তবে মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন ওঠেনি। একটি কারণ, তিনি ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ছায়ায় বোর্ড পরিচালক ছিলেন। তদুপরি, তিনি যে ক্লাবগুলিকে প্রশিক্ষন দিয়েছিলেন তারাও প্রভাবশালী বোর্ড সদস্য ছিলেন।
পরিচালক হিসেবে মাহমুদ বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির সর্বশেষ প্রধান ছিলেন এবং ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ভাইস-চেয়ারম্যানের পদেও ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাকে বিভিন্ন পরিচয়ে দেখা গেছে। জাতীয় দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন বহুবার। প্রধান কোচ, অন্তর্বর্তীকালীন কোচ, সহকারী কোচ, টিম ম্যানেজার এমনকি টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি যে, কখনো কখনো তারা বিসিবির কাছ থেকে ন্যূনতম সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোটা অঙ্কের সম্মানী নিয়েছে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে মাহমুদ ছিলেন বাংলাদেশের ‘টিম প্রধান’। চন্দিকা হাথুরুসিংহে কয়েক মাস আগে বিসিবির চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাই সিরিজের জন্য দলের প্রধান কোচ ছিল না, সহকারী কোচ ছিলেন রিচার্ড হ্যালসল। কিন্তু পরবর্তীতে ‘হেড অব টিম’ মাহমুদ প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। সেই সিরিজের জন্যই বিসিবির কাছ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা সম্মানী নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর মাহমুদ প্রধান কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফরে যান।
বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুক আহমেদ বলেছেন, বোর্ডে স্বার্থের সংঘাত হতে দেওয়া হবে না। এমনটা হলে বোর্ড পরিচালকের পদ থেকে অন্তত ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএলে কোচিং করা মাহমুদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। নাজমুল হাসানের সহযোগী পরিচালক হিসেবে ফারুক আহমেদকে বোর্ডে রাখা অসুবিধার পাশাপাশি কোচিংয়ের দরজা খোলা রাখাও মাহমুদের পদত্যাগের কারণ হতে পারে।
নাইমুর ও মাহমুদের পদত্যাগের পর প্রশ্ন উঠেছে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত পরিচালকের দুটি পদ শূন্য থাকবে নাকি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক নেওয়া হবে। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক আনার কথা ভাবছেন তারা।
নাইমুরই প্রথম বিসিবি নির্বাচিত পরিচালক যিনি ৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। এনএসসির ডিরেক্টর- মনোনীত জালাল ইউনুসও এর আগে এনএসসির অনুরোধে পদত্যাগ করেছিলেন। এনএসসি মনোনীত আরেক পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম পদত্যাগ করতে রাজি না হওয়ায় এনএসসি তাকে অপসারণ করেছে। এই দুজনের জায়গায় বোর্ডে আসেন বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন।
সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান ও পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নিষ্ক্রিয় হয়েও বিসিবির পরিচালকের পদ ছাড়েননি। তবে নাজমুল হাসান সভাপতির পদ থেকে এবং শফিউল আলম চৌধুরী মহিলা শাখার প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।।
Leave a Reply