দেশে বিদ্যুতের মোট গ্রাহক চার কোটি ৬৩ লাখ। যার মাধ্যমে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই হিসাবে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।
দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় শতভাগ গ্রাহকই বঞ্চিত আছে এই সেবা থেকে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। চাহিদা কম থাকায় কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও।
অনেক এলাকায় বিদ্যুৎহীন পরিস্থিতি দুই দিন অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে আসা এলাকাগুলোতে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে তারা কাজ করছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বেশির ভাগ সমিতিতে গ্রাহক সংযোগ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। বিতরণ কম্পানিটির বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৭১৮টি, ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৩৬৩টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৭১ হাজার ৮৬২টি, ইনসুলেটর ভেঙেছে ২২ হাজার ৮৮৬টি, মিটার ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩ হাজার ৪৬৫টি। পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকায় বিদ্যুৎহীন গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০।
বিআরইবির তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়েরর প্রভাবে গতকাল রবিবার দুপুর থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, মেহেরপুর, মাগুরাসহ বেশ কিছু জেলার বেশির ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমাদের বিতরণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড় কমে যাওয়ার পর দ্রুতই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে দিতে আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। যেসব এলাকায় ঝড় কমে এসেছে সেসব এলাকায় আমাদের কর্মীরা কাজ শুরু করেছে।’
বিদ্যুৎ বিতরণ আরেকটি কম্পানি ওজোপাডিকো সোমবার পর্যন্ত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা।
এই কম্পানির চার লাখ ৫৩ হাজার ৮১ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছেন।
এদিকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২৫ মে সন্ধ্যা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৭৫১ মেগাওয়াট।
দেশের বেশির ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে গেছে, যার ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে আবারও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির এলাকায় সকল ধরনের কর্মকর্তাগণের ছুটি বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়।
জেলায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়। তিনি বলেন, বাগেরহাট জেলায় চার লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply