সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পূজার সময় উপহার হিসেবেও ভারতে ইলিশ গেছে বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতে উপহারের ইলিশ পাঠানো ও রফতানি দুইই বন্ধ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে ভারতে রফতানি বন্ধ থাকার পরও দেশের বাজারে কমছে না ইলিশের দাম। উল্টো বেড়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কেরাণীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরকে ধরা হয় ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময় ঘিরে ভোক্তার প্রত্যাশা থাকে দাম কমতির। তার ওপর এ বছর বন্ধ রফতানি। তবে বাজারের চিত্র উল্টো। মৌসুম বা রফতানি বন্ধের প্রভাবের ছিটেফোটারও দেখা মিলছে না।
বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের ভরা মৌসুমেও ইলিশে হাত দেয়া যাচ্ছে না। ফারদিন নামে এক ক্রেতা বলেন,
বাজারে ইলিশের যা দাম, তাতে ইলিশ কেনা এখন বিলাসিতা। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৮০০-২০০০ হাজার পর্যন্ত। এত দাম দিয়ে মাছ কিনতে গেলে অন্যান্য পণ্য কেনার টাকা থাকে না।
আরেক ক্রেতা আফ্রিদি বলেন, ভারতে এবার ইলিশ রফতানি বন্ধ রয়েছে। ভেবেছিলাম এবার কম দামে কেনা যাবে। কিন্তু বাজারে এসে দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ। এত দাম দিয়ে ইলিশ কেনা সম্ভব না।
বিক্রেতাদের দাবি, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ইলিশের দাম। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী হালিম জানান,
বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তবে সেটি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি।
কেরাণীগঞ্জের আগানগর বাজারে মাছ বিক্রেতা হরিপদ জানান, ইলিশের মৌসুম হওয়ায় মানুষের মধ্যে বেড়েছে ইলিশ কেনার প্রবণতা। এর ফলে কমেছে অন্যান্য মাছের বিক্রি।
এদিকে, গত ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘দেশবাসী ইলিশ পাবে না, আর বিদেশে রফতানি হবে, এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর রফতানি করা হবে।’
রফতানি বন্ধের এই ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচারের চেষ্টা চলছে। যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। তারা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রায় প্রতিদিনই ইলিশের অবৈধ চালান ধরা পড়ছে। তাই এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। না হলে দেশে কমবে ইলিশের সরবরাহ। আরও চড়া হবে বাজার।
বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় ইলিশ পাচার বন্ধে চোরাচালান বিরোধী বিশেষ অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply