শিল্পকলার পরিচালক ও অভিনেত্রী বলেছেন, শিল্পকলায় সহকর্মীদের সঙ্গে আমি কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। আসলে সমস্যা কী, তা জানার জন্য। তারা কথা বলবেন না। আমাকে দেখার পর কেন তারা মারমুখী হবেন, এর কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কেন আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে? চেনা সহকর্মীরা অচেনা হয়ে গেলেন। রুম থেকে বের হওয়ার সময় আমি সব জিনিস দেখালাম। যেখানে আমার ব্যক্তিগত জিনিসও ছিল।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শিল্পকলা থেকে বেরিয়ে এক ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে সহকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন জ্যোতিকা জ্যোতি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন জ্যোতি। অফিসকক্ষের বাইরে বিভিন্ন বিভাগের সহকর্মীদের জড়ো হতে দেখে জ্যোতি দরজা বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে শিল্পকলা একাডেমি ত্যাগ করেন। ২০২৩ সালের মার্চে জ্যোতিকা জ্যোতিকে শিল্পকলায় পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।
ফেসবুক লাইভে জ্যোতি বলেন, ‘…যদিও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় চাকরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, আমি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। কিন্তু কীভাবে আমার চাকরিটা হয়েছে, সেটা আমি জানি।…দুজনকে সিভি দিয়েছিলাম। কী চাকরি পাব, সেটা জানতাম না। পরে আমার প্রোফাইল দেখে শিল্পকলায় চুক্তিভিত্তিক চাকরি হয়। ছয় মাস আমার ভেরিফিকেশন হয়েছে। সরকারি সুবিধা পেলে এক দিনের নোটিশে আমাকে বসিয়ে দেয়া হতো।’
জ্যোতিকা জ্যোতি জানান, গত সরকার তাকে দুই বছর মেয়াদের চুক্তিভিত্তিক চাকরির সুযোগ দিয়েছিল। সেই মেয়াদ এখনো আছে। সরকার পতনের পর আগের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের কোনো খবরও তিনি পাননি। তাই এখনও চাকরিটা আছে। দুই মাস ধরে যা চলছে, তাতে শিল্পকলার অফিশিয়াল কাজ বন্ধই বলা যায়। নতুন ডিজি এসেছেন। আমার মনে হলো, অফিসে এখন যাওয়া যায়। যেহেতু চাকরিটা আছে, অফিসে কেন যাব না! সে কারণেই অফিসে আসা।
জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, সবার কাছে একটা খবর যায়, আমাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি তো দায়িত্বপ্রাপ্ত, কেন চলে যাব? পরে ডিজি আসেন। তিনি জানতে চান, এই অবস্থায় কেন এসেছি। আমাকে চলে যেতে বলেন। পরে যে সিদ্ধান্ত হয়, হবে। পরে সচিব স্যার চলে যেতে বলেন। তখন আমি জরুরি কাগজপত্র নিতে রুমে যাই। জ্যোতি জানান, অফিসকক্ষে ব্যক্তিগত কাগজপত্র থাকায় ভেতরে যান। তখন সহকর্মীরা অফিসকক্ষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি দরজা বন্ধ করে দেন।
এর আগে জ্যোতিকা জ্যোতির অফিস ত্যাগের বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর আইরিন পারভীন বলেন, ‘আমরা তাকে বলেছি অফিস থেকে চলে যেতে। কারণ, তিনি ‘আলো আসবেই’ নামে একটি গ্রুপে যুক্ত হয়ে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কথা বলেছেন। এমন লোক আমরা দেখতে চাই না।
আইরিন পারভীনের ভাষ্য, যারা সরাসরি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে উৎসাহিত করেছেন, যারা রক্ত ঝরার জন্য দায়ী, তাদের আমরা সহকর্মী হিসেবে চাই না।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহের মেয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি অভিনয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। তিনি দলটির বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ-৩ আসনে উপনির্বাচনে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি।
Leave a Reply