খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আর এখন পর্যন্ত আহত অন্তত ৫০ জনকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
শহরের জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ির একটি মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাটে হামলা চালানো হয়েছে। রাস্তায় চলাচলকারী বাস, ট্রাক ট্যাক্সিতেও হামলা করা হয়। শহরের হ্যাপির মোড়কে কেন্দ্র করে এর দুদিকে অবস্থান নেন পাহাড়ি ও বাঙালিরা।
এই সংঘাতে একজন নিহত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায় নি। এছাড়াও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার।
এদিকে শুক্রবার দুপুর দেড়টা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খান।
রাঙামাটি পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামালউদ্দিন জানিয়েছেন, সকালে পাহাড়িদের একটি মিছিল বনরূপায় এসে ফিরে যাওয়ার সময় বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করে। এরপরই বাঙালি ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের পাল্টা ধাওয়া দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে সকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ সেনাবাহিনী বিজিবি কাজ শুরু করেছে।
এদিকে আগুনে ফাইবার অপটিক-এর ক্যাবল পুড়ে যাওয়ায় শহরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইয়েস নেট-এর পরিচালক মো. শাহীন।
এর আগে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের নারানখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কাদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
দীঘিনালা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে পাহাড়ি ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা আসলে এসময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ী ও দোকানে হামলা চালায়। খবর পেয়ে বাঙালিরা প্রতিরোধে চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কিছু দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় আহত হয়েছে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন।
পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে শহরে এখনো পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র যৌথ টহল টিম কাজ শুরু করেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনার কারণে শহরে গাড়ি চলাচল ও মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে।
Leave a Reply