বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসছে। বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গোপনে রাজনীতি করা জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরও এবার প্রকাশ্যে রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম সংগঠক আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি।
সমন্বয়কের তালিকায় কায়েমের নাম না থাকলেও জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও তাকে দেখা গেছে। আলোচনা আছে, উপদেষ্টা পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনেও উপস্থিত ছিলেন এই সাদিক।
এবার তাকে নিয়ে রহস্যময় কিছু তথ্য দিয়েছেন আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি। জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলন চলাকালে কায়েমের সঙ্গে তার পরিচয়সহ নানা বিষয় তুলে ধরেছেন জুলকারনাইন।
নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই সাংবাদিক লেখেন, একটা স্ট্যাটাস লিখার জন্যে দুপুর থেকেই চিন্তা করছিলাম, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠার মতো অবস্থা হয়েছিলো আমার সিদ্ধান্তের। এক ফুট উঠে তো আবার দুই ফিট স্লিপ করে নীচে নামে। স্বভাব যেহেতু এ ধরনের মতামত চেপে রাখার বিপক্ষে, তাই আমিও আর চেপে রাখতে পারলাম না। তৈলাক্ত বাঁশটা পার করেই ফেললাম।
ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইর ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো, আমার খুব কাছের বন্ধুদের একটা নেটওয়ার্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমন্বয়ককে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে। মূলত সালমানের সাথে কোঅর্ডিশন করেই সব আয়োজন করা হয়।
বয়সে বেশ ছোট সালমানের সাথে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমার ও আমার বন্ধুদের। ডিবি কার্যালয় যখন সমন্বয়কদের শীর্ষ নেতৃত্ব আটক, তখন সালমান ও অন্যান্য সমন্বয়করা পুরো আন্দোলনের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিরাপদ আবাসে থাকা সবার সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো, সত্যি বলতে কি সালমানের পুরো পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে আমি বেশ অবাকই হচ্ছিলাম। কতইবা বয়স তাঁর, হয়তো ২৪/২৫ হবে, তারপরও এই ছেলে যেভাবে সকল পরিস্থিতে আমার বন্ধুদের পরামর্শে ম্যানুভার করেছে এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সব স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এই তো কয়েকদিন আগেই কথা হলো সালমানের সাথে, কোন পরিবর্তনই নেই ছেলেটার মধ্যে, নিরহংকার সেই একই সালমান। অন্য সকল সমন্বয়কের থেকে সালমান ও কাদের এই দুটো ছেলে একেবারেই ভিন্ন। দুজনের নেতৃত্বই অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
তো আজকে দুপুরে জানলাম সালমানের প্রকৃত নাম শাদিক কাঁইয়ূম (সাদিক কায়েম), এবং তার রাজনৈতিক পরিচয় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ না পেয়েও শিবির যে সালমানের (আমার কাছে সে সালমানই থাকবে) মতো একটা নেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানাই।
সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য ছাত্র রাজনীতি অত্যাবশ্যক এবং তার সদ্ব্যবহার করে যেকোনো রাজনৈতিক দলই যদি সালমান কিংবা কাদেরের মতো তরুণ-তরুণীদের এত ম্যাচিউর্ড নেতা-নেত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারে, তাহলে মন্দ কি?
এছাড়া জুলকারনাইন তার কিছু কমেন্টে লিখেছেন, একটা বিষয় ক্লারিফাই করি, সালমান যদি তখন আমার সঙ্গে শিবির বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে যোগাযোগ করতো, তখন আমি কিছুতেই আমার বিশ্বস্ত বন্ধুদের কাছে তাদের পাঠাতাম না। এর মধ্যে জড়িতই হতাম না। কিন্তু সালমান আমার কাছে এসেছিল সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবে যে তার বন্ধুদের জন্যে নিরাপদ আবাস খুঁজছিল। যেহেতু আন্দোলনটা তখন এক প্রকারের গণঅভ্যুথানে রূপ নিয়েছিল, সে কারণেই আমি সালমান, কাদের ও অন্যদের সহায়তা করি। সালমান তার রাজনৈতিক পরিচয় লুকিয়ে অপরাধ করেছে নাকি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে তা একমাত্র সাধারণ জনগণই বিচার করতে পারে।
জুলকারনাইন আরো লেখেন, যখন থেকে সালমানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, আমি তাকে সাধারণ একটা ছেলে বলেই জানতাম। তার নেতৃত্বের কোয়ালিটি দেখে নিজেই ভাবতাম এরাই পারবে স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করতে। আমি কিন্তু তখন তার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী এসব কিছুই জানতাম না।
Leave a Reply