দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) পরিচালিত গণত্রাণ কর্মসূচির অডিট প্রকাশিত হয়েছে। এতে মোট আয় হিসেবে দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। বর্তমানে ঢাবির দুটি পৃথক ব্যাংকের দুই অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে মোট ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অডিট প্রকাশ করা হয়। এতে অডিট রিপোর্টের বিস্তারিত তুলে ধরেন পি কে এফ আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের পার্টনার গোলাম ফজলুল কবির।
প্রকাশিত অডিট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কিছু সমন্বয়ক আসেন এবং পরবর্তীতে ২১ আগস্ট থেকে এই অডিট শুরু হয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এর মধ্যে যতগুলো ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশনসহ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিয়ে কুয়েরি করা হয়েছে, অডিট প্রসিডিওর অ্যাপ্লাই, থার্ড পার্টি কনফারমেশন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের অডিট পিরিয়ড ছিল প্রায় ২০ দিন। বলা চলে একটা এক্সটেনসিভ অডিট ছিল এটি। এখানে জাতির কাছে দুই ধরনের ডোনেশন পেয়েছিল। একটি হলো ডোনেশন ইন ক্যাশ এবং অন্যটা ডোনেশন ইন কাইন্ড। এখন ডোনেশন ইন কাইন্ড হলো পোশাক-রিলিভ সামগ্রী। এগুলো প্রজেক্ট অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছি কিন্তু এগুলো অডিটের আওতার মধ্যে ছিল না। কেননা এগুলো তো আর টাকাতে কনভার্ট করা যায় না। মূলত এটি হলো ফাইন্যান্সিয়াল অডিট, তারা কত টাকা পেয়েছে এবং কত টাকা আয় করেছে, কত টাকা ব্যয় করেছে, কত টাকা স্থিতি। তারপরে নন ক্যাশ যেসব ট্রানজেকশন রয়েছে এর মধ্যে আমরা যতদূর ডকুমেন্টেশন দেখেছি এব তাদের রিপ্রেজেন্ট অনুযায়ী ১৯০ ট্রাক ১৫ থেকে ১৬টি জেলায় পাঠিয়েছেন। যেখানে ২ লক্ষ ইউনিট প্যাকেজ ত্রাণ পাঠিয়েছেন। এছাড়া পানির বোতলসহ আরো অনেক কিছুই ছিল।
গোলাম ফজলুল কবির বলেন, সকল ডকুমেন্ট দেখে আমরা যে রিপোর্ট করেছি সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবমিলিয়ে নগদ অর্থ পেয়েছে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়েছে ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ২১৬ টাকা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পেয়েছে ৯৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৯ টাকা, টিএসসির বুথে নগদ অর্থ পেয়েছিল ৯ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭২৫ টাকা। এছাড়া অন্যান্য (প্রাইজ বন্ড, স্বর্ণ, পানির বোতল) ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১০ টাকা পেয়েছে।
খরচের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তারা খরচ করেছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। এর মধ্যে রিলিভ সামগ্রী কিনেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ টাকা। এছাড়া কিছু ডোনেশন অর্গানাইজেশন ও কিছু মানুষকে দিয়েছে ১২ লাখ ৬ হাজার ৫শ টাকা। প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল কিনেছে ১১ লাখ ২৪ হাজার ৯৪০ টাকা, ট্রান্সপোর্টেশন খাতে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ২০ টাকা ব্যয় করেছল, ফুড ফর ভলানটিয়ার অর্থাৎ যারা প্যাকেজিং কাজে জড়িত ছিল তাদের খাবার বাবদ ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩ হাজার ৪৯৭ টাকা এবং ছোট-ছোট খাতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১২০ টাকা।
তগোলাম ফজলুল কবির আরও বলেন, সব কিছু বাদ দিয়ে এখন গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের ব্যাংকে টাকা আছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা ব্যাংকে রয়েছে।
অডিট বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, তাদের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল যেগুলো অ্যাকাউন্ট ছিল, এগুলো ব্যক্তির নামে ছিল। এছাড়া তারা ব্যক্তির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিল, সেগুলো সবগুলো সমন্বয় করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তাছাড়া অডিট তো একটা টেকনিক্যাল ব্যাপার, অনেক কাগজপত্র দেখতে হয়েছে, কুয়েরি করতে হয়েছে। সবকিছু নিশ্চিত করার পর, মঙ্গলবার তাদের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
পুরো অডিটে কোন চার্জ করা হয়নি বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন পি কে এফ আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের পার্টনার গোলাম ফজলুল কবির। এছাড়া পুরো অডিটে পাননি কোনো অসঙ্গতিও।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুই শাখায় বর্তমানে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা জমা রয়েছে। এ টাকা বন্যার্তদের পুনর্বাসন এবং উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যয় করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে যে অর্থ সংগ্রহ রয়েছে তা উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে এই বাকি টাকার অংশ থেকে যতগুলো টাকা দরকার, তাদের কাছে আমরা হস্তান্তর করব। এছাড়া আমরা তহবিলের এই অর্থ সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রেরণ করব। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় করা হবে।
Leave a Reply